বগুড়ায় সাধারণ মানুষ ডাব কিনতে হিমশিম

সারাদেশের সাথে পাল্লা দিয়ে বগুড়াতেও বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। এছাড়াও তীব্র গরমে অতিষ্ঠ পথচারি চায় তৃষ্ণা মেটাতে। এজন্য সবারই প্রথম পছন্দ ডাব। তবে ডাবরে দাম অনকে বেশি থাকায় সাধারণ মানুষ এখন ডাব কিনতে ‘হিমশিম’ খাচ্ছেন।

প্রতিদিনই যেন বগুড়ায় ডিমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডাবরে দাম। আকারভেদে প্রতি পসি ডাব বগুড়ায় ১১০ টাকা থেকে ১৮০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। হাসপাতালগুলোর সামনের চিত্র আরও ভয়াবহ। শহরের অদূরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলজে হাসপাতাল এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সামনে একই আকাররে ডাবের দাম বিক্রেতারা নিচ্ছেন পিস প্রতি আরও ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি।

আড়তদারদরে দাবি, খুচরা বিক্রেতারা অতিরিক্তি লাভের আশায় বাড়তি দাম নিচ্ছেন। তারা জানান, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ডাবের ফলন কম হয়। এ ছাড়াও বৃষ্টিতে পিচ্ছিল গাছে উঠে ডাব পাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিবদ্ধকতার জন্য বাজারে সরবরাহ আরও কমে গেছে। এর বিপরীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ ও গরমের তীব্রতা থাকায় চাহিদা তৈরি হয়েছে ব্যাপক। এজন্যই ডাবের দাম এখন সাধারণের নাগালের বাহিরে।

বগুড়া শহরের ফুলতলা, গোদারপাড়া, গোয়ালগাড়ী ও কালিতলার মোট ৪ স্থানে ১৫ টি ডাবের আড়ত রয়েছে।

আড়তদার সূত্রে জানা যায়, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর থেকে বগুড়ায় ডাব সরবারহ করা হয়। প্রতি ট্রাকে দুই থেকে তিন হাজার পিস ডাব আনা হয়ে থাকে। দক্ষিণাঞ্চল থেকে ডাব নিয়ে আসতে আড়তদারদের ট্রাক ভাড়া গুনতে হয় ১৫ হাজার টাকা ।

এছাড়াও দুই হাজার পিস ডাব নিয়ে ট্রাকভাড়াসহ প্রায় ২ লাখ থেকে ২ লাখ ৫ হাজার টাকা খরচ পড়ে যায়। সেই হিসেবে প্রতি পিস ডাবে বগুড়া অব্দি নিয়ে আসতে আড়তদারদের ১০০ টাকা করে খরচ করতে হয়। আর খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সেই ডাব বিক্রি করা হয় ১০৫ থেকে ১২০ টাকায়। এই ডাবগুলোর মধ্যে আকারে ছোট ডাবগুলো আড়তদাররা অর্ধেকেরও কম দামে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ছেড়ে দেন।

ডাবের খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বগুড়া শহরে অন্তত ২০০ মানুষ ডাবের খুচরা ব্যবসার সাথে জড়িত। ভ্যানে করে শহরের বিভিন্ন মোড়ে এই ডাবগুলো তারা বিক্রি করে থাকেন। ছোট আকারের ১০০ পিস ডাব ৭ হাজার, মাঝারি আকারের ১০০ পিস ডাব ১১ হাজার ও বড় আকারের ১০০ পিস ডাব ১৫ হাজার টাকায় আড়তদারদের থেকে ক্রয় করেন তারা। সেই হিসেবে প্রতি পিস ডাব তাদের ৭০ থেকে ১৫০ টাকায় আড়তদারদরে থেকে ক্রয় করতে হয়। আর এই ডাবগুলো ক্রেতাদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১৮০ টাকায়।

শজিমেক হাসপাতালের সামনে একজন রোগীর স্বজন আবু জাফর বলেন, দুই ডাব ৩২০ টাকায় কিনেছি। কয়েকদির পর ডাব কিনতে আসলে দিনদুপুরে ছিনতাই হতে হবে। এগুলো দেখার কেউ নেই। আমরা নি¤œবিত্ত মানুষ ডেঙ্গু রোগীকে এই দামে প্রতিদিন ডাব খাওয়াতে পারবো?

বগুড়া শহরের বড়গোলে মোড়ে ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করেন মহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আড়তদারদের কাছ থেকে কেনার পর ডাব প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ করা হয়। তবে সব ডাবের পিসে এমন হয়না। আবার ভ্যান ভাড়া, খাওয়া খরচ ও সড়কে ব্যবসার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৪০ টাকা বিভিন্ন খাতে চাঁদা দিতে হয়। এছাড়াও ১২ মাসেই ডাবের ব্যবসা সমার থাকেনা। ডেঙ্গু শুরুর পর থেকে ডাবে পিস প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেড়েছে। তবে এর কারণ চাহিদার তুলনায় সরবারহে ঘটতি।

বগুড়ার গোয়ালগাড়ী এলাকার ডাবের আড়তদার শফিকুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু ও গরমে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে এরজন্য দায়ি খুচরা বিক্রেতারা। পাইকারিতে ৫ টাকা লাভে এমনকি ছোট ডাব ক্রয়ের চেয়েও অর্ধেক দাবে বিক্রি করা হয়। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডাবে প্রতি পিসে ২০ থেকে ৩০ টাকা এমনকি ৫০ টাকাও লাভ রাখেন।

Share.

Comments are closed.

Exit mobile version