আপডেট : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:২০ |  অনলাইন সংস্করণ    সৌদি আরবের এফটিএ

বাংলাদেশ-সৌদি আরবের এফটিএ সই‌য়ের এখনই উপযুক্ত সময়

সৌদি আরবের এফটিএ

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) সইয়ের উপযুক্ত সময় এখনই। উভয় দেশের এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিৎ বলে মনে করে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। সোমবার (৬ নভেম্বর) সৌদি আরবে জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে বৈঠক করে এফবিসিসিআই’র ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল। এ সময় উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণের স্বার্থে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তার কথা উত্থাপন করে এফবিসিসিআই।

সম্পর্কিত খবর রিজার্ভ ২১ বিলিয়ন ডলারের নিচে সর্বগ্রাসী হুন্ডির কবলে পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ব্যাংকিং কার্যক্রম ৫ দিন বন্ধ এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, সারা বিশ্বেই ব্যবসা-বাণিজ্যের ধরন পরিবর্তন হচ্ছে। সেই সঙ্গে সামনে আসছে নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ। ২০২৬ সাল নাগাদ এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পর বাংলাদেশও বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে। এমন অবস্থায়, সমন্বিত সাপ্লাই চেইনের সুফলকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জসমুহ মোকাবিলা করতে বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবকে এখনই এফটিএ (মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি) স্বাক্ষরের উদ্যোগ নিতে হবে। বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রপ্তানির অন্যতম একটি গন্তব্য সৌদি আরব উল্লেখ করে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সৌদি আরব বর্তমানে হাই-টেক ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট এবং শিল্প বহুমুখীকরণের জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এই মুহূর্তে তাদের বিপুল দক্ষ কর্মী বাহিনীর দরকার হবে। এদিকে বাংলাদেশ এখন ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ সুবিধার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ দেশে বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম, অভিজ্ঞ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ তরুণ জনশক্তি রয়েছে। সৌদি সরকারকে আহ্বান জানাই, বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশের দক্ষ তরুণ কর্মীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও প্রসারিত করুন।

clipping path tech
বৈঠকে সৌদি আরবের ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরে প্রস্তাবিত সৌদি অ্যারাবিয়া বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের আহ্বান জানান মাহবুবুল আলম

 একই সঙ্গে দেশের অন্যান্য অর্থনৈতিক অঞ্চলেও সৌদি বিনিয়োগকারীদের শিল্প স্থাপনে আমন্ত্রণ জানান তিনি  বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, অবকাঠামো, গাড়ির যন্ত্রাংশ, কেমিক্যাল, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও রবোটিক্স সহ বেশকিছু খাতে সৌদি আরবের বিনিয়োগ সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানানো হয় বৈঠকে।

এসময় বন্দর ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে বাংলাদেশকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয় জেদ্দা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি। পাশাপাশি সৌদি আরবে বাংলাদেশী পণ্যকে পরিচিত করতে ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ এক্সপো আয়োজনেও সহায়তা দেবে বলেন জানান তারা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন— এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. খায়রুল হুদা চপল, মো. রাশেদুল হোসেন চৌধুরী রনি, মো. মুনির হোসেন, পরিচালক মো. হাবিব উল্লাহ ডন, হাসিনা নেওয়াজ, খন্দকার রুহুল আমিন, মূনাল মাহবুব ।

বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বেলা ১২টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে সৌদি আরবের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অপারেটর আরএসজিটিআই ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি সই অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।বুধবার পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের রয়েছে গভীর শ্রদ্ধা ও আস্থা। আমরা সৌদি আরবকে সবসময় কাছাকাছি পেয়েছি।’ এর আগে সৌদি আরবের বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খালিদ আল ফালিহ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। 

বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি আস্থা-সহযোগিতার জন্য সৌদি সরকার, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ ও যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন তিনি

প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে গ্লোবাল অপারেটর আরএসজিটিআই ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ছবি: প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে কনসেশন চুক্তি সইয়ের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকল্পটি বাংলাদেশ-সৌদির মধ্যে একটি শক্তিশালী ও টেকসই অংশীদারত্বের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই কনসেশন চুক্তি অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমৃদ্ধির জন্য আমাদের দুই দেশের যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি ও অটল অঙ্গীকারের উদাহরণ। এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরও জোরদার করবে।’

চুক্তিটি বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী

শেখ হাসিনা বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশার বাতিঘর। স্বয়ংসম্পূর্ণ এই আধুনিক টার্মিনালটি আমাদের বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়াবে এবং নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্য সহজতর করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান ও নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টির পথও সুগম করবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এটি বিশ্ব বাণিজ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করবে ও আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করবে।’

metafore online

আশাবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরএসজিটিআই যে সুনামের সঙ্গে জেদ্দা পোর্ট টার্মিনালসহ অন্যান্য টার্মিনাল পরিচালনা করছে, সেই দক্ষতা ও প্রযুক্তি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটি পরিচালনা করবে বলে আমি আশা করি । এতে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা বাড়বে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হবে।’ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এমন একটি ভবিষ্যতের অপেক্ষায় আছি যেখানে পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সমৃদ্ধির একটি চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে।’ পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে নবনির্মিত ‘পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল’ পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) ও রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল ইন্টারন্যাশনালের (আরএসজিটিআই) মধ্যে কনসেশন চুক্তি সই হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে সৌদি বিনিয়োগমন্ত্রী। ছবি: ফোকাস বাংলা চুক্তিতে সই করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল

 আরএসজিটিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জিন্স অ. ফলেই। এ সময় সফররত সৌদি আরবের বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রী খালিদ আল ফালি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলানসহ সৌদি বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নবনির্মিত ‘পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল’ সরকারি বেসরকারি অংশীদারত্বে (জি আরএসজিটিআই সৌদি সরকার মনোনীত একটি স্বনামধন্য গ্লোবাল টার্মিনাল অপারেটর। জেদ্দা পোর্ট টার্মিনালসহ বিশ্বের বিভিন্ন টার্মিনাল পরিচালনা করছে আরএসজিটিআই। সংশ্লিষ্টরা জানান, আরএসজিটিআই আগামী ২২ বছরের জন্য পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনালটি পরিচালনা করবে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার দক্ষতা বাড়বে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত হবে। দেশের আমদানি-রপ্তানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাসের মাধ্যমে অর্থনীতি লাভবান হবে।

সম্পর্কিত খবর

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version