প্রকাশিত : ২৪ নভেম্বর ২০২৩, ১৬:০৮ | অনলাইন সংস্করণ  প্রতিটি আসনে গড়ে ১১ প্রার্থী

প্রতিটি আসনে গড়ে ১১ প্রার্থী

বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলের জন্য প্রার্থীদের তালিকা সম্পূর্ণ করার জন্য আওয়ামী লীগ প্রোগ্রামটি শুরু করেছিল। প্রধানমন্ত্রী ও দলের রাষ্ট্রপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনী অ্যাপয়েন্টমেন্ট কাউন্সিল এই বিষয়ে কাজ করছে।এই বছর ৩,৩৬২ জন লোক সারা দেশে ৩০০ টি সংসদীয় আসনে পার্টির অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে ফর্মটি কিনেছিল।

ফলস্বরূপ, পার্টি প্রতিটি জায়গার জন্য গড়ে এগারো প্রার্থীর সন্ধান করছে। এই অ্যাপয়েন্টমেন্টের প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সদস্যও রয়েছেন। দলের সেক্রেটারি জেনারেল ওবায়দুল কাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন না।

বৃহস্পতিবার নিয়োগের বৈঠকের পরে, তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন:  প্রতিটি আসনে গড়ে ১১ প্রার্থী

“আজ রংপুরে ৩২ জন প্রার্থী সম্পন্ন হয়েছে, ৫ জন রাজশাহিতে। বর্তমান সংসদের কতজন সদস্যকে বাদ দেওয়া হয়েছে, আমি এখনই বলতে পারি না, তবে আমি প্রত্যাহার প্রত্যাহার করছি” । এটি হ’ল, দলীয় নেতারা এবং সমর্থকরা বিশ্বাস করেন যে শুক্রবার ও শনিবার অন্যান্য বিভাগের নিয়োগ শেষ করার পরে আরও সংসদ সদস্যকে বাদ দেওয়া যেতে পারে। ভদ্রলোক কাদের জানিয়েছেন, তারা শনিবার ২ নভেম্বর শনিবার সমস্ত আসনের বিরুদ্ধে প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করবেন।

এরই মধ্যে, দলের প্রার্থীদের নাম এবং দলের প্রধানের স্বাক্ষরিত চিঠি, যা অ্যাপয়েন্টমেন্টের নথি উপস্থাপন করবে।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দলের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে কার্যক্রম শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত দলটির নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ড বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। চলতি বছর সারাদেশে ৩০০ সংসদীয় আসনে দলের মনোনয়ন পেতে ফর্ম কিনেছেন ৩ হাজার ৩৬২ জন। ফলে দলটিতে প্রতিটি আসনের জন্য গড়ে ১১ জন করে দলের প্রার্থিতা চাইছেন।

এই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত একাদশ সংসদের সদস্যরাও আছেন।  প্রতিটি আসনে গড়ে ১১ প্রার্থী

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ইঙ্গিত দিয়েছেন, বর্তমান সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকে এবার নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আজকে রংপুরের ৩৩, রাজশাহীতে ৩৯টি- মোট ৭২টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। বর্তমান সংসদ সদস্য কয়জন বাদ পড়ছেন, এ মুহূর্তে আমি বলতে পারছি না, তবে বাদ পড়েছেন।’

অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার অন্য বিভাগগুলোর মনোনয়ন চূড়ান্ত করার সময় আরও সংসদ সদস্যরা বাদ পড়তে পারেন বলে ধারণা করছেন দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আগামী ২৫ নভেম্বর শনিবার সব আসনের বিপরীতে মনোনীত দলীয় প্রার্থীদের নাম তারা প্রকাশ করবেন।  প্রসঙ্গত, আগামী সাতই জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর। 

এর মধ্যেই দলীয় প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করে দলীয় প্রধানের স্বাক্ষরসংবলিত চিঠি দেয়া হবে, যা তারা মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেবেন। 

কিসের ভিত্তিতে মনোনয়ন? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে ‘জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য’ প্রার্থীকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ তিনি যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা হলো বিভিন্ন আসনের মনোনয়ন পেতে আগ্রহীদের মধ্যে ‘তুলনামূলক বেশি জনপ্রিয়’ ব্যক্তিকে দল প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে।

clipping path tech

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় ছিলেন দলের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি বলেন, জনপ্রিয় প্রার্থী বাছাই করার জন্য বিভিন্ন জায়গায় জরিপ চালানো হয়েছে। 

‘একই সঙ্গে দলে তার সম্পৃক্ততা, অতীত অবদান, গ্রহণযোগ্যতা- এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এগুলো সম্পর্কে জানতে আগেই একাধিক জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে,’ বলেন বিপ্লব বড়ুয়া। 

জরিপের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে ধারণা নেয়ার বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই। গত ২২ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনা বলেন যে জরিপের ভিত্তিতে যোগ্য ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে। 

‘বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও সার্ভে রিপোর্টের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেওয়া হবে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে,’ ওই সভায় বলছিলেন তিনি। 

ওই সভায় যোগ দিয়েছিলেন এমন বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন যে প্রধানমন্ত্রী দলের মনোনয়নের বিষয়ে এমপিদের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার কিছু বার্তা দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘কাউকে জিতিয়ে আনার দায়িত্ব আমি নিতে পারবো না। আমি কারও চেহারা দেখে মনোনয়ন দেবো না। দেখেশুনে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নমিনেশন দেব। এখানে (সংসদীয় দলের সভায়) যারা আছেন সবাই মনোনয়ন নাও পেতে পারেন।’ 

অর্থাৎ তিনি এমপিদের এই বার্তা তখনি দিয়েছিলেন যে একাদশ সংসদে দলের প্রার্থী হিসেবে যারা এমপি হয়েছেন তাদের অনেকে হয়তো দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নই পাবেন না। আর যারা মনোনয়ন পাবেন না তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বিভিন্ন মাধ্যমে করা জরিপগুলো। মূলত জরিপ রিপোর্টগুলো থেকে উঠে এসেছে এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতা কতটা আছে। 

তবে কোন এমপি মনোনয়ন না পেলে যেন দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা না করেন সেই বিষয়েও ওই সভাতে সতর্ক করেছিলেন শেখ হাসিনা। ‘যাকে নমিনেশন দেব, তার জন্যই সবাইকে কাজ করতে হবে। নমিনেশন পান কিংবা না পান নৌকার বিরোধিতা করা যাবে না। যারা নৌকার বিরোধিতা করবেন তাদের রাজনীতি চিরতরে শেষ,’ বলেছেন তিনি। 

এখন দলের নেতারা বলছেন প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার থেকে মনোনয়ন বোর্ড যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে সেটি মূলত শেখ হাসিনার আগের বক্তব্যেরই প্রতিফলন।
metafore online

এর আগে ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তার আগের সংসদের ৫৬ জন এমপি দলীয় মনোনয়ন পাননি। আবার ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার আগের সংসদের ৪৯ জনকে (মন্ত্রীসহ) মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। 

দলের অনেক নেতার ধারণা এবারেও উল্লেখযোগ্য সংসদ এমপি দলীয় প্রার্থী তালিকায় স্থান নাও পেতে পারেন। 

জোট ও বিএনপির ওপরও দৃষ্টি দলের নেতারা বলছেন যে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঠিক করার কথা বললেও আওয়ামী লীগ তাদের জোট সঙ্গীদের জন্য কিছু আসন ছেড়ে দিয়েই প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারে। 

একাদশ সংসদেও আওয়ামী লীগের জোট মিত্র ওয়ার্কার্স পার্টির একটি সংরক্ষিত নারী আসনসহ মোট চারটি, জাসদের একটি নারী আসনসহ তিনটি, বিকল্পধারা দুটি এবং তরিকত ফেডারেশন ও জাতীয় পার্টি (জেপি)র একজন করে সংসদ সদস্য আছেন। 

এবারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রেও জোট ও মিত্রদের জন্য কিছু আসন ছেড়ে দেয়ার কথা আগেই জানিয়েছেন দলের নেতারা। 

এছাড়া বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি-না তার ওপরও দলটির প্রার্থী অদল বদলের সম্ভাবনা আছে কিছু আসনে। 

এসব বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘জোট হতেও পারে নির্বাচনের আগে, সময় আছে। কাজেই তালিকাও আসতে পারে। এমনও হতে পারে আপনিও ভাবছেন না, আমিও ভাবছি না। কিন্তু কার সঙ্গে কার জোট হয়, কেউ ভাবতে পারে না।’ 

মনোনয়ন বোর্ডের সভায় কারা থাকেন 

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে নির্বাচনের মনোনয়ন বোর্ড দলীয় কমিটিগুলোর থেকে আলাদা। দলটির গঠনতন্ত্রের ২৭ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ জাতীয় সংসদসহ জাতীয় পর্যায়ের সকল নির্বাচনে সংগঠনের পক্ষ থেকে প্রার্থী মনোনীত করতে ১১ সদস্যের একটি সংসদীয় (পার্লামেন্টারি) বোর্ড গঠিত হবে। এটিই মনোনয়ন বোর্ড। 

আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সংসদে আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের নেতা পদাধিকার বলে এই বোর্ডের সদস্য থাকেন। দলীয় প্রধান এই বোর্ডের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক হন। 

অন্য আট সদস্য দলের কাউন্সিল সদস্যদের মধ্যে থেকে জাতীয় কাউন্সিল কর্তৃক নির্বাচিত হয় এবং তাদের মেয়াদও কাউন্সিল নির্ধারণ করে। 

এবার মনোনয়ন বোর্ডে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া সদস্য হিসেবে যারা আছেন তারা হলেন আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, কাজী জাফর উল্লাহ, রমেশ চন্দ্র সেন, ওবায়দুল কাদের, মো. রশিদুল আলম, ও দীপু মনি।

সম্পর্কিত খবর

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version