প্রকাশিত : ০২ অক্টোবর ২০২৩, ১২:০০ এএম | অনলাইন সংস্করণ  বগুড়ায় সন্তানদের অপহরণের হুমকি

বগুড়ায় সন্তানদের অপহরণের হুমকি দিয়ে দেয়ালে লিফলেট

বগুড়ার কাহালুতে সন্তানদের অপহরণের হুমকি দিয়ে বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা দাবি করে বাড়ির দেয়ালে লিফলেট সেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। রোববার সকালে ভোরের আলো ফুটতেই গ্রামবাসীরা যখন কাজে যাবেন ঠিক তখনই বাড়ির সামনে এমন হুমকি দেয়া পত্র দেখে ভীত হয়ে পড়েন। 

গ্রামবাসীরা জানান, শনিবার দিবাগত রাতে কোন এক সময় দুর্বৃত্তরা বিষ্ণুপুর গ্রামের মাজগাড়ি, মিস্ত্রীপাড়া, মোল্লাপাড়া ও দপ্তরিপাড়ায় অন্তত ৫ শতাধিক বাড়ির দেয়ালে এই লিফলেট সেটে হুমকি দিয়েছেন। এ ঘটনায় ভীত পরিবারের অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুল, মাদ্রাসায় পাঠাননি।  

‘দেয়ালে সেটে দেওয়া লিফলেটে বিভিন্ন বাড়ির আর্থিক ও পারিবারিক অবস্থা বিবেচনা করে ২০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদা দাবি করা হয়েছে। আগামী ৬ অক্টোবরের মধ্যে দাবিকৃত চাঁদার টাকা ওই বিষ্ণুপুর গ্রামের লোয়া পুকুর পাড়ে সোলার লাইটের সাথে স্থাপিত বাক্সে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনাও দেয় দুর্বৃত্তদের ওই চক্র। তা না হলে ৭ অক্টোবরের পর থেকে গ্রামের ছেলে-মেয়ে হারিয়ে গেলে কোনো কিছু করার থাকবে না বলে হুমকি দেওয়া হয়। দুর্বৃত্তরা কে বা কারা সেটা না খুঁজে, অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে না ফেলার ব্যাপারেও হুশিয়ারি দেয়া হয়।’ 

‘ওই লিফলেটে বিশেষ দ্রষ্টব্য বলা হয়েছে, এই কাগজ আপনি পড়ছেন, তাহলে মনে করেন আপনার ছেলে-মেয়েকে তুলে আনতেও পারবো। দয়া করে টাকা দিয়েন আমরা ছেলেগুলো ভালো না। ভালো থাকবেন ৬ তারিখ পর্যন্ত।’  বগুড়ায় সন্তানদের অপহরণের হুমকি

clipping path tech

লিফলেটের শেষে প্রেরকের স্থানে ইংরেজীতে শ্যাডো লিখে তার ডানে ও বামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যবহত ইমুজি ব্যবহার করা হয়েছে।  

 মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মাজগাড়ি পাড়ার বাসিন্দা নয়ন মিঞা বলেন, আমার বড় মেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। আর ছোট ছেলের বয়স ৪ বছর। বাড়ির দেয়ালে লিফলেট সেটে ২০০ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে। আতংকে মেয়েকে স্কুলে যেতে দেইনি। ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ভয়ে ভয়ে বাড়িতেই অবস্থান করছি। ছোটবেলায় শুনতাম ঘোষণা দিয়ে ডাকাতি করা হতো। এখন আমাদের সন্তানদের অপহরণের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ দ্রুত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসুক।বগুড়ার প্রায় ৪০০ বাড়ির দেয়ালে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করে কম্পিউটার প্রিন্ট করা কাগজ সাঁটিয়েছেন অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। গত শনিবার রাতে কোনো একসময় জেলা কাহালুর উপজেলার মুরইল ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের বিষ্ণুপুর মাঝগাড়িপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, হিন্দুপাড়া ও মোল্লাপাড়ায় বাড়ির দেয়ালে কাগজগুলো লাগানো হয়েছে। এতে এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

 এ বিষয়ে গতকাল রবিবার সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিষ্ণুপুর গ্রামের চারপাড়ায় বিভিন্ন বাড়ির দেয়ালে কম্পিউটারে প্রিন্ট করা কাগজ সাঁটানো হয়েছে। বগুড়ায় সন্তানদের অপহরণের হুমকি

ওই কাগজগুলোতে ২০০ থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত দাবি করা হয়েছে। দেয়ালে সাঁটানো কাগজগুলোতে লেখা রয়েছে ‘আসসালামু আলাইকুম, ২০০০ টাকা ৬ তারিখে দিতে হবে। না হইলে ৭ তারিখ থেকে আপনাদের ছেলে-মেয়ে হারায় গেলে আমার কোনো কিছু করার থাকবে না। আমি বা আমরা কে সেটা না খুঁজে, আমি যা বলছি সেটা করার চেষ্টা করেন তাহলে কিছু হবে না। অল্প কিছু টাকার জন্য বাচ্চাদের বিপদে ফেলায়েন না। যদি ছেলে-মেয়ের মঙ্গল চান তাহলে লোয়া-পুকুর সোলার লাইটের সঙ্গে যে বক্স থাকবে। নিজের টাকার সাথে একটা কাগজে নিজের নাম লিখে ওই বক্স-এ ফেলান আর নিজের বাচ্চাকে সুরক্ষিত করুন ধন্যবাদ। [বিঃ দ্রঃ আমার এই কাগজ আপনি পড়ছেন তাহলে মনে করেন আপনার ছেলে/মেয়েকে তুলে আনতেও পারবো। দয়া করে টাকাটা দিয়েন আমরা ছেলেগুলা ভালো না। ভালো থাকবেন ৬ তারিখ পর্যন্ত আল্লাহ হাফিজ।’ 

 গতকাল রবিবার সকালে এসব পাড়ার মানুষ তাদের বাড়ির দেয়ালে সাঁটানো কাগজ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

এলাকার মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের খবর দিলে তারা বিষয়টি পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে দেখেন। এসব পাড়ার লোকজন জানান, সকালে উঠে দেখেন দরজার পাশে এসব কাগজ লাগানো হয়েছে। প্রতিটি কাগজে পারিবারিক অবস্থান বুঝে নানা অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছে। দিনমজুরের কাছে সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও বিত্তবানদের কাছে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছে।

metafore online

এ বিষয়ে মুরইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল জলিল ও স্থানীয় মেম্বার জাহিদুর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় লোকজন খবর দিলে বিষ্ণুপুর গ্রামে এসে বিষয়টির সত্যতা পাই। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে এ ধরনের কাজ করেছে একটি চক্র। ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয়রা এ কাজের সঙ্গে জড়িত। নইলে এক রাতে ৩০০ থেকে ৪০০ বাড়িতে এই কাগজ সাঁটানো সহজ নয়। প্রতিটি বাড়িতে বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দাবি করা হয়েছে। তার মানে এলাকার বা আশপাশের কোনো চক্র এ ঘটনা ঘটিয়েছে।’ 

এদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বগুড়ার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ, কাহালু থানার ওসি মাহমুদ হাসানসহ পুলিশ সদস্যরা। 

ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নাজরান রউফ বলেন, গভীর রাতে কে বা কারা এমন লিফলেট বাড়ির সামনে সাঁটিয়ে দিয়েছে। ফলে এলাকার লোকজন ভয় পাচ্ছে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। আমরা ঘরে ঘরে গিয়ে কথা বলেছি। এলাকায় যে বা যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে অতিদ্রুত তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম এ বিষয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন বিষয় সামনে রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।

সম্পর্কিত খবর

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version