আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৮:০৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ  ৩৯ ফিলিস্তিনি 

৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিলো ইসরায়েল

চার দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির ফলে ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। এদিকে ২৫ জন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। কাতারের মধ্যস্ততায় চারদিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম দিনে দুই পক্ষ থেকেই এসব জিম্মি মুক্তি দেওয়া হলো। দুই পক্ষের মুক্তিপ্রাপ্ত জিম্মিদের সবাই নারী ও শিশু। ইসরায়েলের বন্দিদশা থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী, ইসরায়েল ৩৯ জনকে মুক্তি দিয়েছে। জানা গেছে, মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনিরা ওফার কারাগারে বন্দি ছিলেন।

এসব ফিলিস্তিনিকে কারাগার থেকে বের করার আগে সেখানে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে ইসরায়েলি পুলিশ।

শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে চারদিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এই যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুযায়ী, চারদিনে ৫০ ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে হামাস। অন্যদিকে ইসরায়েল ১৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। যুদ্ধবিরতির প্রথমদিন ১৩ জনকে মুক্তি দেওয়ার কথা থাকলেও ২৫ জনকে ছেড়ে দিয়েছে হামাস। আশা করা হচ্ছে, দুই শক্তির এ চুক্তি আরো বাড়বে। যদিও বিরতির পরে ফের যুদ্ধ শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, সব জিম্মির মুক্তি, হামাসের নির্মূল নিশ্চিত করাসহ ইসরায়েলের সব লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ থামবে না। নেতানিয়াহুর এমন হুঁশিয়ারির পর একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।

clipping path tech

সংস্থাটি বলছে, গাজার ফিলিস্তিনিরা ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে।

এ মুহূর্তে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি চালিয়ে যাওয়া উচিত।এর আগে তৃতীয় ব্যাচে ১৩ ইসরায়েলিসহ আরও ১৭ বন্দির মুক্তি দেয় হামাস। সোমবার (২৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার দিনের যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে বন্দি বিনিময়ের তৃতীয় দিনে ৩৯ ফিলিস্তিনি বন্দির তৃতীয় ব্যাচকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাদের মুক্তি উপলক্ষ্যে রোববার রাতে অধিকৃত পশ্চিম তীরের রামাল্লায় বিশাল সংখ্যক ফিলিস্তিনি জনতা রাস্তায় নেমে আসেন। সেখানে তারা মুক্তি পাওয়া বন্দিদের বহনকারী রেড ক্রসের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। এসময় কেউ কেউ ফিলিস্তিনের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল হামাস ও ফাতাহ-এর পতাকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি পতাকাও ওড়ান। শাকির মাহাজনা নামে এক ব্যক্তি তার পরিবারের সাথে তার ছেলে ওমরের জন্য রামাল্লায় অপেক্ষা করছিলেন। তার ছেলে ওমরের বয়স সম্প্রতি ১৮ বছর হয়েছে জানিয়ে শাকির আল জাজিরাকে বলেন, ‘প্রথমে আমরা বিশ্বাস করিনি। শেষবার যখন আমি তাকে দেখতে গিয়েছিলাম তখন সে হতাশ হয়ে পড়েছিল।

metafore online

সে আমাকে বলেছিল- ‘বাবা আমি এখান থেকে চলে যেতে চাই’।

’ তার ছেলেকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তখন তার বয়স ১৬ বছর ছিল বলেও জানান তিনি। নুর আরার নামে এক নারীর ১৭ বছর বয়সী ভাই জেইদকে গত জুলাইয়ে গ্রেপ্তার হয়েছিল। আল জাজিরাকে তিনি বলেছেন, ‘অক্টোবরে যা ঘটেছে তার পরে আমি আরও ভয় পেয়ে যাই। যুদ্ধের কারণে সবকিছু স্থগিত করা হয়েছিল। বিচারও হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা খুশি, কিন্তু আমরা মিশ্র অনুভূতি অনুভব করছি।

গাজায় যা ঘটছে তাতে আমাদের আনন্দ অসম্পূর্ণ। এদিকে রামাল্লা ছাড়াও কাছাকাছি বেইতুনিয়ায়ও কিছু ফিলিস্তিনি জড়ো হয়েছিলেন।

ইসরায়েলি বাহিনী তাদের লক্ষ্য করে তাজা গুলিবর্ষণ করার পর ১৫, ১৮ এবং ৩৩ বছর বয়সী তিনজন ফিলিস্তিনি আহত হন বলে প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) জানিয়েছে। পিআরসিএস আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর নিক্ষেপ করা টিয়ার গ্যাসের কারণে ১১ ও ১৩ বছর বয়সী দুটি শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এর আগে ইসরায়েলের সঙ্গে চারদিনের যুদ্ধবিরতির তৃতীয় দিনে ১৭ বন্দিকে মুক্তি দেয় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল রোববার জানিয়েছে, বন্দিদের রেডক্রসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন ইসরায়েলি। আর বাকি চারজন বিদেশি নাগরিক। গাজায় ৪০ হাজার টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল আর বিবিসি জানিয়েছে, ১৩ ইসরায়েলি, তিন থাই এবং এক রাশিয়ানকে রেডক্রসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে বলে হামাস নিশ্চিত করেছে।

উল্লেখ্য, দেড় মাসেরও বেশি সময় যুদ্ধ চলার পর গত শুক্রবার চারদিনের যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছায় হামাস ও ইসরায়েল। এ চুক্তি অনুযায়ী, হামাস ৫০ ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দেবে। অপরদিকে ইসরায়েল তাদের কারাগার থেকে ১৫০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে। সোমবার এই চুক্তির শেষ দিন। ইসরায়েল হুমকি দিয়ে আসছে, যুদ্ধবিরতি শেষ হলেই তারা আবারও গাজায় হামলা চালানো শুরু করবে। তবে কাতারসহ অন্যান্য দেশগুলো বলছে, যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়ানো হবে।

তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version