ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় গতকাল আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে জ্বালানি তেলের দাম। শীর্ষস্থানীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো উচ্চ সুদহার লম্বা সময় ধরে অপরিবর্তিত রাখতে পারে, এমন খবরে শক্তিশালী হয়েছে ডলারের বিনিময় হার। এর ধারাবাহিকতায় জ্বালানি তেলের বাজারে দরপতন ঘটেছে। খবর রয়টার্স।

চলতি মাসের মাঝামাঝি ফিউচার মার্কেটে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম প্রতি ব্যারেলে ৯৪ ডলার স্পর্শ করে, যা গত নভেম্বরের পর সর্বোচ্চ। সর্বশেষ গতকাল ব্রেন্টের দাম ব্যারেলে ১ ডলার ১৬ সেন্ট বা ১ দশমিক ২৪ শতাংশ কমেছে। ব্যারেলপ্রতি মূল্য দাঁড়িয়েছে ৯২ ডলার ১৩ সেন্টে। একই সময়ে নিউইয়র্ক মার্কেন্টাইল এক্সচেঞ্জে (নিমেক্স) মার্কিন বাজার আদর্শ ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েটের (ডব্লিউটিআই) দাম কমেছে ব্যারেলে ১ ডলার ১৩ সেন্ট বা ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। প্রতি ব্যারেলের মূল্য স্থির হয়েছে ৮৮ ডলার ৫৫ সেন্টে।

অকল্যান্ডের সিএমসি মার্কেটসের বাজার বিশ্লেষক টিনা টেং বলেন, ‘‌গত সপ্তাহে ফেডের সুদহার অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্তের কারণে মার্কিন বন্ডের চাহিদা বেড়ে যাবে। বাজারে পুনরায় মন্দা দেখা দিলে তেলের বাজার আবারো ঊর্ধ্বমুখী হতে পারে।’‌

বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারক মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ ও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শক্ত অবস্থান নিয়েছে। লম্বা সময় ধরে উচ্চ সুদহার বহাল রাখার নীতি নিয়েছে তারা। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। অর্থনীতি মন্থর হয়ে এলে জ্বালানি তেলের চাহিদাও কমতে পারে। ফলে দাম কমবে পণ্যটির।

আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারে জ্বালানি তেল কেনাবেচা হয়। ডলারের দাম বেড়ে গেলে ভিন্ন মুদ্রার গ্রাহকদের জন্য জ্বালানি তেল আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। ক্রেতারা ক্রয় কমিয়ে দিলে চাহিদা কমে নিম্নমুখী প্রবণতায় পড়ে পণ্যটির দর। এদিকে উচ্চ সুদহারের কারণে মার্কিন বন্ডের চাহিদা বাড়ায় বিনিয়োগকারীরা বেশি পরিমাণে ডলার কিনতে শুরু করে। এতে মঙ্গলবার ডলারের দর ১০ মাসের সর্বোচ্চে ওঠে।

মার্কিন বহুজাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান জেপি মরগানের মতে, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সরবরাহ স্বল্পতার কারণে বাজারে জ্বালানি তেলের দাম প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ফলে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশমিক ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে গেছে।

ওপেক প্লাস লম্বা সময় ধরেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন কমাচ্ছে। সম্প্রতি জোটটি চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। এমনটা মনে করছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। চলতি ও আগামী বছর পণ্যটির চাহিদা অব্যাহত বাড়বে বলেও মনে করছে সংস্থাটি।

জ্বালানি তেল রফতানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেক। এর সঙ্গে নন-ওপেক কিছু দেশের জোটকে বলা হয় ওপেক প্লাস। জোটটি ২০২২ সাল থেকেই বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে উত্তোলন কমাতে শুরু করে। ওপেক প্লাসের গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য সৌদি আরব ও রাশিয়া। জোটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী উত্তোলন কমানোর পাশাপাশি এককভাবেও দেশ দুটি উত্তোলন কমাচ্ছে। আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত উভয় দেশ দিনে ১৩ লাখ ব্যারেল করে উত্তোলন কমাবে। এমন সিদ্ধান্তের কারণে চলতি মাসে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আদর্শ ব্রেন্টের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯০ ডলারে উঠে এসেছে, যা এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ওপেক প্লাসের সদস্য দেশগুলোর দৈনিক অপরিশোধিত জ্বালানি তেল উত্তোলন ২৫ লাখ ব্যারেল করে কমেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলসহ জোটের বাইরের দেশগুলোর উত্তোলন ঊর্ধ্বমুখী। এছাড়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখে থাকা ইরানের উত্তোলনও বাড়ছে। ফলে বৈশ্বিক সরবরাহে কিছুটা ভারসাম্য তৈরি হচ্ছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version