তাঁরা নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী, ভোটে আছেন তবে প্রচারে নেই

পাবনা-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম ফারুক পোস্টার টানিয়ে শহর প্রায় ভরে ফেলেছেন।

প্রতিদিনই গণসংযোগ করছেন তিনি। কিন্তু তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রচারে দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। গোলাম ফারুক বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কাগজে-কলমে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী চারজন। তাঁরা হলেন জাতীয় পার্টির আবদুল কাদের খান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির মো. জাকির হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. আবু দাউদ ও তৃণমূল বিএনপির মো. আফজাল হোসেন। নৌকার প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির জাকির হোসেনের কিছু পোস্টার দেখা যায়। তৃণমূল বিএনপির আফজাল হোসেনের পোস্টার নেই। তবে তাঁর পক্ষে ব্যাটারিচালিত একটি অটোরিকশা দিয়ে এক ব্যক্তি শহরে ঘুরে ঘুরে মাইকিং করেন। বাকিরা পোস্টারে নেই, গণসংযোগে নেই, মাইকিংয়েও নেই।

স্থানীয় রাজনীতির খোঁজ রাখা ব্যক্তিরা বলছেন, পাবনা-৫ আসনে নৌকার প্রার্থীর জয় মোটামুটি নিশ্চিত। চার প্রতিদ্বন্দ্বীকে মূলত জামানত রক্ষার জন্য লড়তে হবে। ভোটের প্রচার কেন নেই, জানতে চাওয়া হয়েছিল বর্তমান সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী (পাবনা-৫) দলের জেলা সভাপতি আবদুল কাদের খানের কাছে। তিনি বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। পরবর্তীতে তা হয়নি, আসন ভাগাভাগি হয়েছে। পরে দল থেকে তেমন কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। আর্থিক সহায়তাও করা হয়নি।

ফলে আমরা কিছু করতে পারছি না। দলীয় সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’সবচেয়ে বড় কথা জনগণ ভোট দিতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে না।

এ কারণে আমরা কোনো প্রচার চালাচ্ছি না। সিরাজুস সায়েফিন, জাতীয় পার্টির প্রার্থী (মাগুরা–১) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আর মাত্র আট দিন বাকি থাকলেও অনেক আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রচারের অবস্থা অনেকটা পাবনা-৫ আসনের মতো। এসব আসনে জোরালো প্রচার আছে, নির্বাচনী এলাকাজুড়ে পোস্টার আছে, গণসংযোগ আছে, মাইকিং আছে—তবে তা মূলত নৌকার। আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রচারে কোথাও নামকাওয়াস্তে রয়েছেন, কোথাও একেবারেই অনুপস্থিত। এবারের নির্বাচন বর্জন করছে বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দল। ভোটে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৮টির প্রার্থী রয়েছে। তবে প্রথম আলোর প্রতিবেদকদের পাঠানো তথ্য ও দলীয় সূত্রের খবর অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকা ২৬৬ আসনের মধ্যে শতাধিক আসনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। কারণ, এসব আসনে দলেরই নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।

metafore online

জাতীয় পার্টির জন্য আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া ২৬টি আসনের মধ্যে ১৬টিতে এবং জোট শরিকদের ছেড়ে দেওয়া ৬টি আসনে উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার ৩৫টি আসনে ভোটের প্রচারের চিত্র দেখেছেন। এর মধ্যে ১০টিতে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রচার মোটামুটি সমানে সমান দেখা গেছে। ২৪টি আসনে প্রচারে রয়েছে কার্যত নৌকা, একটিতে জাতীয় পার্টি (আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসন)। এই ২৫ আসনে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী নেই।‘তাঁদের তো চিনিই না’ হবিগঞ্জ শহরের বাণিজ্যিক এলাকায় বৃহস্পতিবার ওষুধ কিনতে এসেছিলেন সদর উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের গৃহবধূ রাবিয়া বেগম। পাইকপাড়ায় নির্বাচনের প্রচার কেমন চলছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, নৌকার প্রার্থীর কথা তিনি জানেন। এর বাইরে কারা প্রার্থী হয়েছেন, তা তিনি জানেন না।

রাবিয়া বলেন, ‘অন্যরা কে বা কারা তাঁদের তো আমি চিনিই না।’ নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সংসদ সদস্য মো. আবু জাহির। প্রতিদিনই তিনি, তাঁর স্বজন ও অনুসারীরা বিভিন্ন এলাকায় প্রচারে যাচ্ছেন। বিপরীতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী আট প্রার্থীর কারও কারও প্রচার একেবারেই কম, কারও কারও কোনো প্রচারই নেই। আবু জাহির ছাড়া এই আসনে জাতীয় পার্টির আবদুল মুনিম চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. আবদুল কাদির, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের মো. আদম আলী, জাকের পার্টির মো. আনছারুল হক, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মো.আব্দুল ওয়াহেদ, বাংলাদেশ সংসদ। নোমান হাসান, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম। বদরুল আলম সিদ্দিকী ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি মুক্তিজোট। শাহিনুর রহমান প্রার্থী ছিলেন।

 

হবিগঞ্জ সদরে নৌকার অনেক পোস্টার। জাতীয় পার্টির কিছু পোস্টারও দেখা যায়। অন্য কোন পক্ষ জড়িত নেই.হবিগঞ্জ জেলা সুশাসনের নাগরিক কমিটির (সুজন) সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মিছবা-উল-বাহরী প্রথম আলো</em>কে বলেন, নির্বাচনে কে জিতবে তা বলা সহজ।

তবে দ্বিতীয় স্থানে কে আসবে তা বলা মুশকিল। কারণ অন্য প্রার্থীরা কম পরিচিত এবং নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেননি।.নির্বাচনে জয়ী কে হবেন, তা সহজে বলে দেওয়া যায়। তবে দ্বিতীয় কে হবেন, সেটা বলা কঠিন। কারণ, বাকি প্রার্থীরা সবাই স্বল্প পরিচিত এবং প্রচারে নেই। চৌধুরী মিছবাহ উল বারী, সাধারণ সম্পাদক, সুজন (হবিগঞ্জ) তাঁদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার ‘শক্তি’ নেই প্রথম আলোর প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা দুদিনে মৌলভীবাজারের চারটি, পাবনার পাঁচটি, হবিগঞ্জের একটি, নেত্রকোনার পাঁচটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি, পঞ্চগড়ের দুটি ও মাগুরার দুটি আসনে প্রচার কেমন চলছে, তার খোঁজ নেন। পাশাপাশি ঢাকার চারটি ও চট্টগ্রামের ছয়টি আসনে পরিস্থিতি দেখা হয়।

যেসব আসনে নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রচার একেবারেই কম, তার একটি নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরী) আসন। এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব সাজ্জাদুল হাসান। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তাঁর বাবা প্রয়াত চিকিৎসক আখলাকুল হোসাইন গণপরিষদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। সাজ্জাদুলের তিন প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন জাতীয় পার্টির মো. লিয়াকত আলী খান, জাসদের মো. মুসফিকুর রহমান ও তৃণমূল বিএনপির মো. আল মামুন। মোহনগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শহীদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে এখন যাঁরা নৌকার প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী আছেন, তাঁদের প্রতিপক্ষ হিসেবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো শক্তি নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থীরই নেই। তাই সাজ্জাদুল হাসানের বিজয় নিশ্চিত। ঢাকা ও চট্টগ্রাম ঢাকা জেলা ও মহানগরে মোট আসন ২০টি।

clipping path tech

তাঁরা হলেন জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ সফিক-উল আলম চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের স ম জাফর উল্লাহ, তৃণমূল বিএনপির মো. ইয়াহিয়া জিয়া চৌধুরী ও স্বতন্ত্র শফিউল আজম।

ফজলে করিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অন্য প্রার্থীর কথা বলতে পারব না। আমি প্রতিদিন প্রচার চালাচ্ছি। অন্যদের ব্যানার-পোস্টার দেখছি।’ তিনি বলেন, তিনি আশা করেন, তাঁর আসনে ভোট পড়বে ৭০ ভোটার টানাই চ্যালেঞ্জ নির্বাচনে সব দল অংশ নিলে এবং ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হলে ভোটার উপস্থিতি বেশি হয়। দেশে ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫৫ শতাংশ, ১৯৯৬ সালে (জুন) ৭৬ শতাংশ, ২০০১ সালে ৭৫ শতাংশ এবং ২০০৮ সালে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন।

ভোট হয়েছিল ১৪৭টি আসনে। নির্বাচন কমিশন বলেছিল, ১৪৭টি আসনের ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন।

২০১৮ সালের নির্বাচনে সব বড় দল অংশ নিলেও ভোট নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এবারের নির্বাচনে গণসংযোগের সময় প্রার্থীরা ভোট দেওয়ার অনুরোধের পাশাপাশি ভোটারদের কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধও করছেন। অন্যদিকে ভোটাররা নৌকার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের খোঁজ পাচ্ছেন না। মাগুরা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের প্রতিদ্বন্দ্বী চারজন। তাঁরা হলেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের কাজী রেজাউল হোসেন, জাতীয় পার্টির সিরাজুস সায়েফিন, বিএনএফের কে এম মোতাসিম বিল্লাহ এবং তৃণমূল বিএনপির সঞ্জয় কুমার রায়। এর মধ্যে কেবল বাংলাদেশ কংগ্রেসের ডাব প্রতীকের কিছু পোস্টার ও প্রচার মাইক দেখা যায়। বর্তমান সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিরাজুস সায়েফিন নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেন। পাশাপাশি তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা জনগণ ভোট দিতে ইচ্ছুক বলে মনে হচ্ছে না। এ কারণে আমরা কোনো প্রচার চালাচ্ছি না।’

সম্পর্কিত খবর:

বিদেশের মাটিতে দেশের গল্প

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version