বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মী মামলায় জর্জরিত। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় দলটির পাঁচশতাধিকের বেশি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এরই প্রভাব পড়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আন্দোলনে। কর্মসূচি দিলেও নেতাকর্মী দলীয় কার্যালয়ের গন্ডির বাইরে যেতে পারে না গ্রেপ্তার আতঙ্কে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ২০১৩ সালের ৩ মার্চ চাঁদে দেখার গুজব ছড়িয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা পরিষদ, থানাসহ রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ঘটনায় ৩টি মামলা দায়ের হয়। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের পর সারাদেশে টানা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত। এ সময় যানবাহনে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের মতো ব্যাপক নাশকতার ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের নামে ২০টি মামলা দায়ের হয়েছে থানায়। এই মামলায় উপজেলার বিএনপি-জামায়াতের ৬৩৬ জন নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন ও থানায় তদন্তধীন রয়েছে। তাই আন্দোলন সচল রাখতে প্রকাশ্যে মাঠে নামতে পারেননি নেতারা। একদিকে গ্রেপ্তারের ভয়, অন্যদিকে সরকারদলীয় কর্মীদের হামলার ভয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন তাঁরা। কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে কখনও দলীয় কার্যালয়ের ভিতরে ফটো সেশন আবার কখনও তাঁরা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পালন করছেন। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বেড়েছে পুরনো মামলায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বিএনপির নেতারা জানান, এক মামলায় হাজিরা। আরেক মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রায় দিনই যেতে হয় আদালতে। ১১ বছর ধরে একইভাবে চলছে। আদালত থেকে বাসা। বাসা থেকে আদালত। যাওয়া-আসার মধ্যেই মাস পার হয়। আর এখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা অনেক প্রভাব দেখান। আমাদের স্বাভাবিকভাবে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হয় না। তাছাড়া পুলিশও আমাদের সঙ্গে চরম বৈরী আচরণ করে। নতুন করে মামলা না হলেও ভয় থাকে। মামলার কারণে নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।

নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক বেলায়েত হোসেন আদর বলেন, তাঁর নামে ১১টি মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। ‘আদালত-কারাগার তো আমাদের নেতাকর্মীদের এখন বাড়ি-ঘর। প্রকাশ্যে কেন্দ্রীয় ঘোষিত কর্মসূচি পালন করতে গেলেই পুলিশি বাঁধাসহ সরকার দলের নেতারা পাল্টা শান্তি সমাবেশের ডাক দেয়। বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করা হয়। একারণে কৌশলেই কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে ।

নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি আলেকজান্ডার বলেন, নন্দীগ্রাম উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলায় জর্জরিত। তার বিরুদ্ধেও ১২টি মামলা চলমান রয়েছে বলে দাবি করেন। এইসব মিথ্যা মামলা দিয়ে কোণঠাসা করে রাখার চক্রান্ত করা হচ্ছে । এই উপজেলা বিএনপির ঘাঁটি। এসব মামলা দিয়ে আন্দোলন থামানো যাবে না। গণআন্দোলনে সরকারের পতন হবেই।’

এবিষয়ে নন্দীগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, দুটি মামলা থানায় তদন্তধীন ও বাকী মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামীরা জামিনে আছেন।

ক্রেডিট : নন্দীগ্রাম (বগুড়া) প্রতিবেদক

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version