নিখোঁজের ১৩ দিন পর বগুড়ার শাজাহানপুরের খাদাসপাড়া গ্রামে থেকে নিখোঁজ আব্দুল্লাহ সাগর (২৩) লাশ উদ্ধার করেছে পিবিআই। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ করতে গিয়ে একই গ্রামের তিন প্রতিবেশি তাকে হত্যা করে। পরে গ্রামে এক ডোবায় ককচুরিপানার মধ্যে সাগরের লাশ মাটিচাপা দেওয়া হয়। নিখোঁজের আগে তার মুঠোফোনে আসা শেষ ফোনকলের সূত্র ধরেই পিবিআই হত্যাকারীদের শনাক্ত করে।

নিহত সাগর খাদাশ পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে।

এই ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন প্রতিবেশি হলেন, শাজাহানপুর উপজেলার খাদাস পশ্চিমপাড়া গ্রামের মৃত ছলিম উদ্দিনের ছেলে আবু মুসা (৩৮), আজিজার রহমানের ছেলে কালাম (২৬) ও খাদাস আলুবাড়ী গ্রামের মৃত হায়দার আলীর ছেলে বাবলু হোসেন (২৫)। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার দুপুরে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এই সময় পিবিআই সদস্যরা কড়া নিরাপত্তায় গ্রেপ্তার মুসাকে বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পড়িয়ে লাশ চাপা দেওয়া ডোবাতে নিয়ে যায়। তিনি সেখানে পিবিআই সদস্যদের লাশের অবস্থান শনাক্ত করে দেন।

বগুড়া পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির জানান, ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে গ্রেপ্তার মুসা নিহত সাগরকে মুঠোফোনে কল দিয়ে বাড়ির পাশে বাঁশবাগানে মুঠোফোনে ডেকে নেয়। অপহরণের উদ্দেশ্যে গলায় গামছা পেঁচিয়ে সাগরকে অজ্ঞানের চেষ্টা করে মুসা ও গ্রেপ্তার দুই আসামি৷ এই সময় নিশ্বাস আটকে সাগর জ্ঞান হারালে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। পরে তার মরদেহ পাশে ডোবায় কচুরিপানার চাপা দেয় আসামিরা। ঘটনার আকস্মিকতায় গ্রেপ্তার মুসা বগুড়া থেকে ঢাকায় পালিয়ে যান। এদিকে অনেক খোঁজাখুজির পর সাগরকে না পেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর শাজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পরিবার৷ পরে বৃহস্পতিবার রাতেই সাগরের মা ঋর্ণা বেওয়া অজ্ঞাতদের আসামি করে অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সুপার বলেন, থানায় জিডি হওয়ার পর থেকেই পিবিআই ছায়া তদন্তে নামে। তথ্য প্রযুক্তির সাহায্য ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মুসাকে শনাক্ত করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার মেহায়তপুরে অভিযান চালিয়ে বগুড়া পিবিআই তাকে গ্রেপ্তার করেন । একপর্যায়ে মুসা হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ও বাকি দুই আসামির নাম বলে দেন। পরে ওইরাতেই অভিযান চালিয়ে নিজ নিজ বাড়ি থেকে কালাম ও বাবুলকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই৷

পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবির আরও বলেন, নিহতকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গলা কেটে মৃত্যু নিশ্চির করা হয়েছে৷ প্রাথমিকভাবে অপহরণের পর মুক্তপণ আদায়ের জন্য এই ঘটনা ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে৷ এরসাথে আর কেউ জড়ির আছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে৷

নিহত সাগরের চাচা রায়হান ইসলাম বলেন, সাগর অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের ছেলে। কারও সাথেই তার ঝামেলা ছিল না৷ প্রতিবেশিরা আমার ছেলেকে এইভাবে খুন করবে স্বপ্নেও ভাবা যায়না। সাগর নিখোঁজের পর থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ নেয়নি। উল্টো আমার স্ত্রী তানিয়ার মুঠোফোন এক অফিসার কেড়ে নেন। প্রতিপক্ষ কাউকে ফাঁসাতে এই নাটক করছি বলে তিনি আমাদের থানা থেকে বের করে দেন৷ পরে স্থানীয় প্রভাবশালী কিছু মানুষের সহযোগিতাস থানায় জিডি করলে পিবিআই তদন্ত করে খুনিদের গ্রেপ্তার ও সাগরের লাশ উদ্ধার করে। মুসাসহ গ্রেপ্তার তিন আসামির ফাঁসি দাবি করেন তিনি।

তবে রায়হানের অভিযোগ অস্বীকার করে শাজাহানপুর থানা পুলিশের ওসি শহীদুল ইসলাম বলেন, সাগরের নিখোঁজের খবর পেয়ে পুলিশ তাদের ডেকে এনে জিডি নিয়েছিল। কেউই তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি৷ অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version