প্রকাশিত : ২০:৪২, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | অনলাইন সংস্করণ  ওসির বিরুদ্ধে

ওসির বিরুদ্ধে ধুনটের এক স্কুলছাত্রীর মায়ের অবস্থান কর্মসূচী

নিজের ধর্ষণের বিচার চেয়ে গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছিল বগুড়ার ধুনটের এক স্কুলশিক্ষার্থী। তাকে ধর্ষণের প্রমাণ মেলে মেডিকেল পরীক্ষায়। আসামিও স্বীকারোক্তি দিয়েছেন আদালতে। কিন্তু ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিও নষ্ট করেন এক থানার ওসি। সেটিও পিবিআইয়ের তদন্তে প্রমানিত হয়। 

বছর ঘুরে এলো। মামলা আর এগোচ্ছে না। ধর্ষণের আলামত ধ্বংসকারী সেই পুলিশ কর্মকর্তাও দিব্বি আছেন বহাল তবিয়তে। আবার ওসি হয়েছেন পাবনার সদর থানার। আর বিচারের জন্য মামলার চার্জশিটের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন নির্যাতনের শিকার মেয়েটির বাবা-মা। 

এমন হতাশা নিয়ে শনিবার বেলা ১১ টার দিকে বগুড়া শহরের সাতমাথায় অবস্থান নেন ধর্ষণের শিকার মেয়ের মা। প্রায় এক ঘণ্টা তিনি সাতমাথায় অবস্থান করে বিচারের দাবি জানান।  ওসির বিরুদ্ধে

স্কুলছাত্রীর মার ভাষ্য, চার্জশিট মিলবে, তবে নিজের মেয়ের ধর্ষণের আলামত নষ্টকারী পুলিশের সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালার নাম বাদ দিতে হবে। এমন অভিযোগ তুলে প্রতিকার পেতে গত ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেলের (আইজিপি) কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীর মা। একই আবেদনের একটি অনুলিপি দেয়া হয়ে বগুড়ার পিবিআই কার্যালয়ে। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৩ মার্চ বেলা ১১টার দিকে মেয়েটিকে নিজ ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করেন জালশুকা হাবিবর রহমান ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মুরাদুজ্জমান। শুধু তাই নয়, ধর্ষণের কিছু আপত্তিকর দৃশ্যও মুঠোফোনে ধারণ করেন ওই প্রভাষক। 

এমন অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ১২ মে সকালে ধুনট থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগীর মা। মামলার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর ১৯ মে প্রধানমন্ত্রীর বরাবর নিজ হাতে চিঠি লেখে নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রী। 

পরবর্তীতে ওই বছরের ২ আগস্ট ধুনট থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ধর্ষণের আলামত ধ্বংসের অভিযোগ করেন ধুনট উপজেলার এক স্কুলছাত্রীর মা। তিনি বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর কাছে লিখিতভাবে ওই অভিযোগ দেন। কিন্তু অভিযোগের পর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় অসন্তুষ্ট হন ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর মা।

clipping path tech

এক পর্যায়ে ২৮ আগস্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে মামলা ও ওসির বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগ তদন্তভার দেয়ার দাবি জানান তিনি। তার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের অক্টোবরে মামলার দায়িত্বভার নেন পিবিআই পরিদর্শক সেলিম মালিক। পরবর্তীতে ১ নভেম্বর থেকে মামলার তদন্ত করছেন এসআই সবুজ আলী। 

আর ওসি কৃপা সিন্ধুর অভিযোগটি দেখছেন পিবিআই এসপি কাজী এহসানুল কবির। চলতি বছরের ৩০ মার্চ ওসির বিরুদ্ধে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় আইজিপির দপ্তরে প্রতিবেদনটি জমা দেন পিবিআই এসপি। 

অভিযুক্ত ওসি কৃপা সিন্ধু বালা ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত বগুড়ার ধনুট থানার দায়িত্বে ছিলেন। রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে পাবনা জেলায় পাঠানো হয়। তিনি বর্তমানে পাবনা সদর থানার ওসি হিসেবে কর্মরত আছেন। 

 এ ঘটনার পর প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও মামলার কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরে ভুক্তভোগীর বাবা-মা অভিযোগ দেন। 

অবস্থান কর্মসূচীতে মামলার বাদি বলেন, কৃপা সিন্ধু বালার অপরাধগুলি প্রমাণ করে প্রতিবেদন দাখিল করেছে পিবিআই বগুড়ার কার্যালয়। তা সত্ত্বেও পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার উদ্ধারকৃত ফোন দুটি বিভিন্ন সময়ে একাধিক সংস্থায় ফরেনসিক করেছেন। ফরেনসিক শেষে ফোন দুটি এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বগুড়ার কার্যালয়ে পাঠানো হয়। খবর পেয়ে মামলার সার্বিক অবস্থা জানার জন্য আমি ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০ টার দিকে বগুড়ার পিবিআইয়ের এসপি কাজী এহসানুল কবিরের কার্যালয়ে উপস্থিত হই। তিনি আমাকে জানান যে, পিবিআই বগুড়া ও পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার কর্তৃক ফরেনসিক রিপোর্টের ফলাফল একই এসেছে। সুতরাং পিবিআই বগুড়া কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতিবেদনে কৃপাসিন্ধু বালাকে ফৌজদারী ও বিভাগীয় আইনের যে সমস্ত ধারায় অপরাধী সাব্যস্ত করা হয়েছিল তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার মহোদয় মামলার মূল চার্জশিটে কৃপা সিন্ধু বালাকে বাদ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। এসপি কাজী এহসানুল কবির আমাকে কৃপাসিন্ধু বালা ব্যতীত চার্জশিট নেওয়ার প্রস্তাব করিলে আমি তা প্রত্যাখ্যান করে বাসায় চলে আসি। 

অভিযোগকারী আরও বলেন, বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তীর গঠিত তদন্ত কমিটি যেমন আমার উপস্থাপিত সমস্ত প্রমাণাদি আড়াল করে সিআইডির ফরেনসিক নির্ভর প্রতিবেদন আপনার দপ্তর দাখিল করেছিলেন,

ঠিক তেমনি পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার মহাদয় মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কৃপা সিন্ধু বালাকে মামলা থেকে রেহাই দেয়ার তথ্য সম্পর্কে আমি অনেক আগেই অবগত হয়েছিলাম। 

মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৪ মে স্কুলছাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। এর প্রায় দেড় মাসের দিকে প্রতিবেদন দেয়া হয়। এতে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজন হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মিজানুর রহমান, প্রভাষক মাকসুদুর রহমান আকন্দ ও রোকসানা খাতুন স্বাক্ষরিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আমরা সবাই একমত যে এখানে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক স্থাপনের একাধিক চিহ্ন রয়েছে।

metafore online
মামলার বাদি স্কুলছাত্রীর মা বলেন, মামলার শুরু থেকে ওসি কৃপা সিন্ধু বালা আমাদের সাথে অন্যায় করে আসছেন। সঠিক চার্জশিট দেয়ার জন্য তিনি প্রায় ৫ থেকে ৭ লাখ টাকার ঘুষ দাবি করেছিলেন।

বিভিন্ন সময়ে ১ লাখ ২২ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এর মধ্যে ২০ হাজার টাকা ওসি কৃপা সিন্ধু নিজেই নিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আসামি মুরাদের সঙ্গে আপোষ করে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করেন তিনি। আলামত হিসেবে জব্দ মোবাইল ফোন বেআইনিভাবে নিজের হেফাজতে নিয়ে ওই সময় বগুড়া সদর থানা, ছিলিমপুর ফাঁড়ি, আদমদিঘী থানায় পাঠিয়েছেন। সবশেষ উনি প্রমাণস্বরুপ ভিডিওগুলো নষ্ট করেন। 

এটা উনি কিভাবে করতে পারেন এ প্রশ্ন করে বাদি জানান, ভিডিও নষ্টের বিষয়টি পিবিআই পুলিশ সুপার কাজী এহসানুল কবিরের তদন্তে প্রমানিতও হয়েছে। সেই প্রতিবেদনও জমা দেয়া হয়েছে। মামলার পরে মেডিকেল রিপোর্টেও ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। আসামি জবানবন্দিও দিয়েছে। তাহলে তো মামলার তদন্তের আর কিছু নেই। তারপরেও চার্জশিট মিলছে। কারণ জানতে গেলে কৃপা সিন্ধু বালার নাম বাদ দিয়ে চার্জশিট নেয়ার কথা জানানো হয় আমাদের। এটা যদি হয় তাহলে তো মামলার আর কিছুই থাকলো না। অপরাধের বিচারের কিছুই থাকবে না। 

 টাকা নেয়া ও ধর্ষণ মামলার আলামত নষ্টের অভিযোগের বিষযে পাবনা সদর থানার বর্তমান ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, সব বানোয়াট, মিথ্যা। তিনি বিভিন্ন জায়গায় এমন অভিযোগ করছেন। এগুলো আমাকে হয়রানী ও সম্মানহানীর জন্য করছেন। 

ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সবুজ আলী বলেন, মামলার তদন্ত এখনও চলমান আছে। শুনেছি মামলার আসামি মুরাদুজ্জামান জামিন পেয়েছেন। তবে আমার কাছে এ সংক্রান্ত কোনো নথি নেই। 

 তবে ভুক্তভোগীর মায়ের অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানান পিবিআই বগুড়া কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী এহসানুল কবির। তার ভাষ্য, উনি কী মনে করছেন তা আমি জানি না। আমি কিন্তু এমন কোনো তথ্য দিইনি, যে কৃপা সিন্ধু বালা চার্জশিটে অন্তর্ভূক্ত হবেন না। তদন্ত এখনও চলমান। ধর্ষণের আলামত নষ্টের ঘটনায় বিভাগীয় তদন্তে আমরা কিছু পারিপাশির্^ক প্রমাণ পেয়েছি। খুব শিগগীর আমাদের তদন্ত শেষ হবে। 

ধর্ষন মামলার আলামত ধ্বংসের অভিযোগ ও প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরেও কৃপা সিন্ধু বালা এখনও একটি থানার ওসি হিসেবে কর্মরত আছেন। এ বিষয়ে এসপি কাজী এহসানুল কবির বলেন, এটি পুলিশ হেডকোয়ার্টারের বিষয়। তারা এটি দেখবেন। তবে অভিযোগকারীরা যাতে ন্যায় বিচার পান সেটি আমরা অবশ্যই দেখব।

সম্পর্কিত খবর

পাবনায় আটকা পড়ল ভয়ঙ্কর রাসেল ভাইপার

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version