নাটোরে সুদের টাকা দিতে না পারায় আসাদ আলী (৫৫) নামে এক কৃষককে শিকলবন্দী করে রাখা হয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সুদ কারবারি আব্দুল আজিজকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ ভোর ৪টায় গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়। নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পুলিশ জানায়, শনিবার সুদের টাকা আদায়ের জন্য ভুক্তভোগী ওই কৃষককের বাড়ি থেকে তাকে জোরপূর্বক তুলে এনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিকলবন্দী করে রাখে অভিযুক্ত আব্দুল আজিজ। ঘটনাটি গনমাধ্যমে প্রকাশ পেলে রাতেই অভিযুক্তকে আটকের জন্য অভিযানে নামে পুলিশ। তারই ধারাবাহিকতায় আজ ভোর ৪টার দিকে আব্দুল আজিজকে বাড়ি থেকে আটক করা হয়। এঘটনায় ভুক্তভোগীর স্ত্রী শাহানা খাতুন বাদী হয়ে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, সারারাত অভিযান পরিচালনা করে মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে জমি লিজের শর্তে সুদের কারবারি আজিজের থেকে ৮০ হাজার টাকা নেন কৃষক আসাদ। প্রথম দুই বছর সুদের টাকা ঠিক মতো পরিশোধ করলেও চলতি বছরের টাকা দিতে পারেনি কৃষক আসাদ।

অনেক বার তাগাদা দিয়েও টাকা না পেয়ে সকালে কৃষক আসাদের বাড়িতে গিয়ে তার হাত-পা বেঁধে তুলে নিয়ে আসেন আব্দুল আজিজ ও তার লোকজন। পরে আজিজের বাড়ির বারান্দার খুঁটির সঙ্গে মাজায় শিকল পরিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখা হয় ওই কৃষককে।

শিকলবন্দি কৃষক আসাদ আলী বলেন, তিন বছর আগে আমি জমি লিজের ভিত্তিতে সুদে ৮০ হাজার টাকা নিয়েছিলাম আব্দুল আজিজের কাছ থেকে। গত দুই বছরে ২০ হাজার টাকা সুদ এবং আসল ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছি তাকে। বাকি ৫০ হাজার টাকা এ বছর দেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু হঠাৎ করেই একটি দুর্ঘটনায় আমি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাই। তিনি বলেন, সংসারে স্ত্রী ও দুই মেয়ে আছে। একটি ছেলে ছিলো সে বাড়িতে থাকে না। আমার উপার্জনেই সংসার চলতো। অভাবগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় আজিজের পাওনা টাকাগুলো দিতে বিলম্ব হচ্ছিল। তাই আজ সকালে আজিজ ও তার বাবা আফজাল হোসেন সঙ্গে কয়েকজনকে নিয়ে আমার বাড়িতে আসেন। আমি বাড়িতে শুয়ে ছিলাম।

আনুমানিক সকাল ৮টার সময় আমাকে জোড়পূর্বক হাত-পা বেঁধে তারা তুলে নিয়ে আসে। এরপর আব্দুল আজিজের বসতবাড়ির বারান্দায় মাজায় শিকল পরিয়ে তালাবদ্ধ করে রাখে। টাকা না দিতে পারলে আমাকে ছেড়ে দেবে না বলে জানায়। আমার এই মুহূর্তে টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version