আপডেট: ১৫২১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৬, ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ হত্যার অভিযোগ উড়িয়ে দিল ভারত
হত্যার অভিযোগ উড়িয়ে দিল ভারত
পাকিস্তানের মাটিতে ২০২৩ সালে দুই নাগরিককে ভারতীয় এজেন্টরা হত্যা করেছিল- ইসলামাবাদের এমন অভিযোগকে মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছে নয়াদিল্লি।
কানাডায় শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী হত্যাকাণ্ডে ভারতের জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠার কয়েক মাস পর পাকিস্তানের এ অভিযোগটি সামনে আসে। তবে অটোয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ভারত।
বৃহস্পতিবার ইসলামাবাদ বলেছে, দুটি হত্যাকাণ্ড এবং ভারতীয় এজেন্টদের মধ্যে সংযোগের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ রয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ দাবিকে বিদ্বেষপূর্ণ ভারত বিরোধী প্রচারণা- বলে আখ্যা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গেল বছরের সেপ্টেম্বরে রাওয়ালকোট শহরে মোহাম্মদ রিয়াজ নামে এক ব্যক্তি নিহত হন, আর অক্টোবরে শিয়ালকোট শহরে শহীদ লতিফ নিহত হন। তাদের একজন মসজিদে নামাজরত অবস্থায় এবং আরেকজন বাইরে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটি প্রকাশ করেনি এই লোকেরা কারা ছিলেন কিংবা কেন দিল্লি এজেন্ট দিয়ে তাদের হত্যা করল। পররাষ্ট্র সচিব মুহাম্মদ সাইরাস কাজি এসব হত্যাকাণ্ডকে অগ্রহণযোগ্য এবং সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন বলে আখ্যা দেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। অর্থনৈতিক ও ফরেনসিক প্রমাণ আছে যে, ওই দুই হত্যাকাণ্ডে দুই ভারতীয় এজেন্টের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক আইনের জন্য ভারতকে অবশ্যই এর দায় নিতে হবে।
ভারত সরাসরি পাকিস্তানের উত্থাপিত সুনির্দিষ্ট অভিযোগের উল্লেখ না করে দেশটিকে সন্ত্রাসবাদ, সংগঠিত অপরাধ এবং অবৈধ আন্তঃজাতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল বলে অভিহিত করে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ভারতসহ অন্যান্য অনেক দেশ প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে, সন্ত্রাস ও সহিংসতার নিজস্ব সংস্কৃতিই তাদের গ্রাস করবে। পাকিস্তানের মাটিতে দেশটির দুই নাগরিককে হত্যার সঙ্গে ভারতীয় এজেন্টদের যুক্ত থাকার অভিযোগ করেছিল ইসলামাবাদ। এ দুটি হত্যাকাণ্ডের ‘বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ’ রয়েছে বলে দাবি করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে ভারত বিষয়টিকে ‘ভারতবিরোধী প্রোপাগান্ডা’ বলে অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পররাষ্ট্রসচিব মুহাম্মদ সাইরাস কাজী সাংবাদিকদের কাছে তাঁর দেশের দুই নাগরিককে হত্যার জন্য ভারতকে দায়ী করেন। তিনি কাজী শহিদ লতিফ ও মুহাম্মদ রিয়াজ নামে নিহত দুই পাকিস্তানির কথা উল্লেখ করেন, যারা গত বছর পৃথক ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। সাইরাস জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের রাওয়ালাকোটের একটি মসজিদে ফজরের নামাজের সময় রিয়াজকে হত্যা করা হয়েছিল।
এর এক মাস পরে গত অক্টোবরে পাঞ্জাবের শিয়ালকোটের একটি মসজিদের বাইরে খুন হন লতিফ। পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের পদ্ধতি কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনার মতোই।’ গত বছর কানাডায় হরদীপ সিং নিজ্জার নামে এক শিখ নেতার হত্যাকাণ্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে শিখ নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের হত্যাচেষ্টার সঙ্গে ভারতীয় এজেন্টরা জড়িত ছিল বলে সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে। যদিও এই অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত অভিযোগের মতোই পাকিস্তানের অভিযোগও নাকচ করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
তারা বিষয়টিকে ভারতবিরোধী প্রোপাগান্ডা বলে উল্লেখ করেছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর সিং জাইসওয়াল বলেছেন, ‘আমরা পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবের কিছু মন্তব্যের বিষয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখেছি। এটি মিথ্যা ও ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ প্রচার চালানোর পাকিস্তানের সর্বশেষ প্রচেষ্টা।’ রণধীর সিং বলেন, ‘বিশ্ব জানে, পাকিস্তান দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাস, সংগঠিত অপরাধ ও অবৈধ আন্তর্জাতিক কার্যকলাপের কেন্দ্রস্থল।
ভারত ও অন্যান্য অনেক দেশ প্রকাশ্যে পাকিস্তানকে সতর্ক করেছে যে, দেশটি সন্ত্রাস ও সহিংসতার নিজস্ব সংস্কৃতি দ্বারা একদিন আচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।’ ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘নিজের অপকর্মের জন্য অন্যকে দোষারোপ করা কোনো যুক্তি বা সমাধান হতে পারে না।’ এ সময় তিনি সতর্ক করে বলেন, পাকিস্তান তার কৃতকর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করবে।