আপডেট : ২ অক্টোবর ২০২৩, ০৫:২৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ এলএনজি গ্যাসে বিশাল ব্যয়
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তুতি নিতে ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিলেন জ্বালানি উপদেষ্টা, তবে মধ্য মেয়াদে দাম স্থিতিশীল ও নাগালে থাকবে বলে জানান রাজধানীতে গতকাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী (বাঁ থেকে চতুর্থ) l প্রথম আলো রাজধানীতে গতকাল মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত সেমিনারে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক–ই–ইলাহী চৌধুরী (বাঁ থেকে চতুর্থ) l প্রথম আলো দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হওয়ার পর জ্বালানির দাম কত হবে, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা।
এ উদ্বেগ প্রকাশ পেল ব্যবসায়ীদের প্রভাবশালী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) এক ভোজসভায়। এতে কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা বলেছেন, এলএনজি অনেক ব্যয়সাপেক্ষ। এটি আমদানি শুরু হলে গ্যাসের দামে ধাক্কা আসতে পারে। মধ্য মেয়াদে গ্যাসের দাম স্থিতিশীল থাকা উচিত এবং ভবিষ্যতে কত দাম হতে পারে, তা আগে থেকেই বুঝতে পারার একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত। যাতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় নিয়ে পরিকল্পনা করা যায়। রাজধানীর মতিঝিলে চেম্বার ভবনে গতকাল বুধবার এ ভোজসভার আয়োজন করা হয়।
এমসিসিআই প্রতি তিন মাস পরপর ভোজসভার আয়োজন করে। এবারের সভায় অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী
এ ছাড়া এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি লায়লা রহমান কবির, তপন চৌধুরী, সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি কামরান টি রহমান, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আনিস এ খানসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন। তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, আগামী বছরের শুরুতে দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট করে এলএনজি আমদানি শুরু হবে। বছরের মাঝামাঝিতে গিয়ে যোগ হবে আরও ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি। তাতে বছরের মাঝামাঝি থেকে আমদানি দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হবে। ফলে গ্যাস সরবরাহ মোট ৩৭ শতাংশ বাড়বে। তাতে এখনকার সংকট কেটে যাবে। অনুষ্ঠানের শুরুতে দেওয়া স্বাগত বক্তব্যে এমসিসিআইয়ের সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, গত কয়েক বছরে দেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে।
উৎপাদন ক্ষমতা ৩ হাজার ২৬৮ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ১৪ হাজার ৩৭৯ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। সরকার ২০২১ সাল নাগাদ এ উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করতে চায়। এ ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় ব্যবসায়ীদের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। মানসম্মত গ্যাস ও বিদ্যুতের প্রাপ্তি, দামের স্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যতে দাম কেমন হতে পারে, তা আগে থেকে বুঝতে পারা। নিহাদ কবির আরও বলেন, গত সাত বছরে গ্যাসের দাম ছয় দফা ও বিদ্যুতের দাম সাত দফা বাড়ানো হয়েছে। আরও এক দফা বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের দাম কম থাকার সুফল ক্রেতা পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এমসিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, ‘সরকার বিশাল পরিমাণে এলএনজি ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এতে খরচ বেশি। এলএনজি ব্যবহারে গ্যাসের দামের ওপর ধাক্কা আসতে পারে।
’ তিনি আরও বলেন, ‘এটাও একটা প্রশ্ন যে আমরা জ্বালানির ক্ষেত্রে বিদেশি উৎসের ওপর অতিনির্ভর হয়ে পড়ছি কি না, যেখানে বিশ্ববাজারে দামে অস্থিতিশীলতা ও সরবরাহ ব্যাহত হলে এ গুরুত্বপূর্ণ খাতে আমাদের অর্জন সংকটে পড়ে
প্রশ্নোত্তর পর্বে তপন চৌধুরী গ্যাস-সংকটের কথা উল্লেখ করে জানতে চান, সত্যিই এলএনজি আগামী বছরের শুরুতে আমদানি শুরু হবে কি না। এ সময় তিনি ফার্নেস অয়েল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, এটি শিল্পের ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা হয়। এর অন্য কোনো ব্যবহার নেই। ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম বলেন, এলএনজির মূল্য নিয়ে তিন থেকে পাঁচ বছরের একটি নীতিমালা থাকা দরকার, যাতে পণ্য উৎপাদনের ব্যয় নিয়ে ধারণা করা যায়।
তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ভবিষ্যতে গ্যাসের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ থাকবে, কিন্তু ক্রমান্বয়ে শিল্পকে ব্যয় বহনের প্রস্তুতি নিতে হবে। তবে তিনি এ-ও উল্লেখ করেন, মধ্য মেয়াদে গ্যাসের দাম স্থিতিশীল এবং তা নাগালের মধ্যে থাকবে। সভায় শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে শুল্ক তুলে নেওয়ার আশ্বাস দেন। অনুষ্ঠানে দেশীয় কয়লা উত্তোলনের সুপারিশ করলেও জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ববাজারে কয়লার দাম বেশ কমই আছে। তিনি জানান, আগামী বছর ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে। এ ছাড়া নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে জলবিদ্যুৎ নিয়ে আলোচনা চলছে। সবশেষে সমাপনী বক্তব্যে নাসিম মঞ্জুর বলেন, ‘আমাদের সঠিক দামে ভালো জ্বালানি দিন, আমরা দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’