আপডেট: ০৯:৪২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৪ | অনলাইন সংস্করণ শীত বাড়লে রোজগার কমে তাদের
শীত বাড়লে রোজগার কমে তাদের
ঢাকা: কথিত আছে মাঘের শীত বাঘের গায়ে লাগে। মাঘ মাসের প্রথম দিকেই শুরু হয়েছে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ।
শীতে কাঁপছে দেশ। গত কয়েক দিনের শীতে নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছে বিপাকে। তারা বলছেন, শীত বেশি পড়লে বিক্রি-রোজগার কম হয়। মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নিম্ন আয়ের মানুষদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেল। ফার্মগেট এলাকার রিকশা চালক লক্ষণ কান্তি দাস। সাতক্ষীরা থেকে ঢাকা এসেছেন আয়-উপার্জনের উদ্দেশ্যে। পরিবারকে ভালো রাখতে, ভালো খাওয়াতেই ঢাকায় আসা। এমনটাই জানান লক্ষণ। তিনি বলেন, শীত বাড়লে ইনকাম কম হয়। রাস্তায় মানুষজন কম থাকে এই কারণে খ্যাপ কম পাই। তিনি বলেন, শীত কম থাকলে খ্যাপ মারি প্রতিদিন ১২-১৫শ টাকা। শীত পড়লে খ্যাপ পাই না।
গত কয়দিন সর্বসাকুল ৮শ থেকে হাজার টাকা ইনকাম হইছে। আজকে খ্যাপ ভালো।
মিরপুর-১১ নম্বর বাস স্ট্যান্ড এলাকায় পিঠা বিক্রেতা আমেনা বলেন, কয় দিনের শীতে মানুষজন ঘর থেকে বাইরে আসেনি। এই কয়দিন বিক্রি একটু কম হয়েছিল। পিঠা বানায়ছি কিন্তু সব পিঠা বিক্রি করতে পারিনি। আজকে (মঙ্গলবার) মোটামুটি শীত কম তাই বিক্রিও ভালো। মিরপুর ১২ নাম্বার ঝালমুড়ি বিক্রেতা মো. খায়রুল। দিনাজপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন ভালো রোজগারের আশায়। পরিবার নিয়ে থাকেন মিরপুরে। খায়রুল বলেন, শীত কম থাকলে আলহামদুলিল্লাহ বিক্রি ভালো থাকে। আজকে মানুষজন ভালোই বাহিরে এসেছে আমারও বিক্রি ভালো হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আমার বিক্রি হয় ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকার মতো। শীত বেশি থাকলে বিক্রি নেমে আসে হাজার টাকায়।
কালশী রোডের সবজি বিক্রেতা রুহুল আমিন বলেন, শীতের সঙ্গে পাইকারি সবজি বিক্রেতারাও অজুহাতে দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয় সবজির। একইভাবে শীত বেশি পড়লে সবজি বিক্রি কমে যায়। আমার প্রতিদিনের রোজগার দিয়ে চলতে হয়। রোজগার কমে গেলে পরিবার নিয়ে বিপদে পড়ে যাই। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এই শীত চলতি জানুয়ারি মাসের পুরো সময়জুড়ে থাকতে পারে। তবে আগামী দুই থেকে তিন দিন দেশের উপকূলসহ কয়েকটি এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে এবং থাকতে পারে মেঘ। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গতকাল মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগজুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজার, ভোলা, কুমিল্লা ও বরিশালে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দু-একটি জায়গা থেকে শৈত্যপ্রবাহ কমে গেলেও অধিকাংশ এলাকায় তা অব্যাহত থাকতে পারে।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে গত কয়েকদিন ধরে শীতের তীব্রতা বেড়েই চলছে। ফলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশায় খেটে-খাওয়া মানুষের জনজীবনে বেড়েছে দুর্ভোগ ও হতাশা।
কমেছে আয়-রোজগার। ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে পড়তে হচ্ছে বিপাকে। তাদের মধ্যে বেশি হতাশায় পড়েছেন- ব্যাটারিচালিত অটোভ্যান চালক, অটোরিকশা চালক ও দিন মজুর শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। বুধবার সকালে বঙ্গবন্ধু পূর্ব রেল স্টেশনে কথা হয় রহিজ উদ্দিন নামে ৫২ বছর বয়সি এক শ্রমজীবীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গরমকালে দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা রোজগার হতো। কিন্তু শীতের সময়ে অর্ধেকে নেমেছে। কেননা শীতে অটোভ্যানে যাত্রী ওঠে না। ঠান্ডায় বাতাস বেশি লাগে। এখন মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে।
দিনে যা রোজগার হচ্ছে এতে করে সংসার চলছে না। স্থানীয় এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে অটোভ্যান বানিয়েছিলাম। কিস্তি নিয়ে এখন বিপাকে পড়েছি।’ অপর এক অটোভ্যান চালক কদ্দুস মিয়া। সে প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব রেল স্টেশন থেকে ভূঞাপুর সড়কে ভ্যান চালাই। বাড়ি পাথাইলকান্দি এলাকায়। তিনি বলেন, ‘শীতকাল এলে আয় কমে যায়। সারাদিন ঘুরে ২০০ টাকাও আয় হয় না। শীত আসলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের অনেক কষ্ট হয়। ঠিকমতো ভ্যান চালানো যায় না। গতবারের চেয়ে এবার বেশি শীত পড়েছে। পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কাটাতে হচ্ছে।’
শুধু রহিজ বা কদ্দুস মিয়া নয়। তাদের মতো এমন আরও শতশত এসব পরিবহন শ্রমিকরা শীতের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছে।
সন্তানদের লেখা পড়ার খচর চালাতে হিমসিম খাচ্ছেন। শীতের মধ্যে দিন মজুরের কাজও পাওয়া যায় না। এদিকে, নিম্ন আয়ের অনেক পরিবার তীব্র শীতে কষ্টে রাত্রীযাপন করছেন। এসব মানুষগুলো শীত নিবারণের জন্য পাচ্ছেন না শীতবস্ত্র। তবুও শীতের সঙ্গে যুদ্ধ করে চলছে তারা। এদিকে, গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) টাঙ্গাইলের তাপমাত্রা ছিল ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টাঙ্গাইল জেলা আবহাওয়া অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।