গাজীপুরের পাঁচ আসনে পোস্টারও ছাপাননি অনেক প্রার্থী

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুরের ৫টি আসনে ৩৮ জন প্রার্থী হয়েছেন।

এর মধ্যে ১৪ প্রার্থীকে প্রচার-প্রচারণা করতে দেখেননি ভোটাররা। তাঁদের পক্ষে কোনো মাইকিং নেই; এমনকি পোস্টারও ছাপাননি অনেকে। ভোটের মাঠ সরব রেখেছেন কেবল আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। গাজীপুরের পাঁচটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাত নেতাসহ নয়জন।

এ ছাড়া জাতীয় পার্টির চারজন, তৃণমূল বিএনপির একজন, ইসলামী ঐক্যজোটের একজন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) একজন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের দুজন, গণফোরামের একজন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের তিনজন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশনের তিনজন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের একজন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চারজন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) দুজন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের একজন, বিএনএফের একজন প্রার্থী রয়েছেন।আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা করলেও আমাদের প্রত্যাশার বিপরীতে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ইফতেখার শিশির, সাধারণ সম্পাদক, সচেতন নাগরিক কমিটি , গাজীপুর ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।

metafore online

১১ দিনের প্রচার-প্রচারণায় দেখা যায়, অন্তত ১৪ প্রার্থী মাঠে নেই।

ভোটে দাঁড়িয়েও নিষ্ক্রিয় থাকা এসব প্রার্থী নিয়ে নানা গুঞ্জন রয়েছে। ভোটকেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল থেকে সুবিধা নিয়ে তাঁরা ভোটের মাঠে নাম লিখিয়েছেন বলেও উঠছে অভিযোগ। জাতীয় পার্টির গাজীপুর মহনগরের সভাপতি এম এম নিয়াজ উদ্দিন একাই গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও সিটির একাংশ) ও গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও গাজীপুর সদর একাংশ) দুটি আসনে দাঁড়িয়েছেন। প্রতীক পাওয়ার পর দুটি আসনের গুরুত্ব ও জনবহুল এলাকায় কিছু পোস্টার সাঁটিয়েছেন। কিন্তু তাঁর কোনো প্রচার নেই। শোনা যায়নি তাঁর পক্ষে মাইকিংও। জানতে চাইলে এম এম নিয়াজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন করার মতো পরিবেশ নেই, যার কারণে আমি নির্বাচন থেকে সরে যাব। দু–এক দিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।’

কেন দুটি আসন থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দলীয় সিদ্ধান্তে দুটি আসনে প্রার্থী হয়েছিলাম।’ গাজীপুরের পাঁচটি আসনের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গাজীপুর-১ (কালিয়াকৈর ও গাজীপুর সিটির একাংশ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম (রাসেল)। এই আসনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ফজলুর রহমান কয়েকজন নিয়ে একটু–আধটু প্রচার চালাচ্ছেন। কিন্তু তরীকত ফেডারেশনের সফিকুল ইসলাম, গণফ্রন্টের আতিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএফ) আর্শেদুজ্জামানের কোনো প্রচার নেই। তাঁদের পক্ষে কোনো মাইকিং, ব্যানার–পোস্টারও চোখে পড়েনি।জানতে চাইলে আর্শেদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখনো পোস্টার লাগানো বা মাইকিং শুরু করিনি। তবে দু–এক দিনের মধ্যে পোস্টার লাগানো শুরু হবে।

ব্যাপকভাবে না পারলেও কিছু এলাকায় মাইকিংও করা হবে।

’ গাজীপুর-২ (গাজীপুর সিটির একাংশ ও ক্যান্টনমেন্ট এলাকা) আসনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসানের (রাসেল) সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল ইসলামসহ নয়জন প্রার্থী। তাঁদের মধ্যে প্রচার–প্রচারণায় একেবারেই নেই তিনজন। তাঁরা হলেন তরীকত ফেডারেশনের সৈয়দ আবু দাউদ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এস এম জাহাঙ্গীর আলম ও ইসলামিক ফ্রন্টের আমির হোসাইন। বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একতরফা নির্বাচনে কী হচ্ছে, কেমন হচ্ছে—সবই আপনারা জানেন। দলীয় কোনো ফান্ড নেই। নিজের খরচে যতটুকু পেরেছি, কিছু জায়গায় পোস্টার লাগিয়েছি।

clipping path tech

২৫ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে কিছু পোস্টার লাগানো হয়েছে।’

কিন্তু এসব এলাকা ঘুরে তাঁর কোনো পোস্টার দেখা যায়নি। গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর একাংশ) এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রোমানা আলীকে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন। দুই প্রার্থীই চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার। আসনটিতে মোট প্রার্থী সাতজন। এর মধ্যে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির জয়নাল আবেদীন দপ্তরি ও তরীকত ফেডারেশনের জয়নাল আবেদীন কোনো প্রচার চালাননি।

জেলার গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া) নিষ্ক্রিয় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মাসুদ চৌধুরী ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবদুর রউফ খান। গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ ও সদর একাংশ) আসনের নিষ্ক্রিয় থাকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন জাতীয় পার্টির এম এম নিয়াজ উদ্দিন, গণফেরামের সোহেল মিয়া ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের তরিকুল ইসলাম আকন্দ। সোহেল মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোস্টার না দেখার কারণ হলো, ক্ষমতাসীন দলের লোকজন আমার ব্যানার–পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে দিয়েছে। ডিসি অফিসে আমি অভিযোগও দিয়েছি।’ সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) গাজীপুরের সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, ‘আমরা একটি অংশগ্রহণমূলক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশা করলেও আমাদের প্রত্যাশার বিপরীতে একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যদিও বেশ কিছু আসনেই শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন, তবে তাঁদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, অন্যান্য প্রার্থীরা ধরেই নিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারণা করে সময় ও অর্থ নষ্ট হতে পারে।’

সম্পর্কিত খবর:

দুই প্রার্থী সতর্ক, কর্মীরা ‘গরম’

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version