আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৪:১৩ ঘণ্টা,   এএম  |  অনলাইন সংস্করণ  যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি

ক্রমেই কমছে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু দেশটিতে পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ক্রমাগত কমেই চলেছে। চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই রপ্তানি কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ (৩৪ দশমিক ৭১ শতাংশ)। যুক্তরাষ্ট্রের (ইউএস) ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদন অনুসারে, জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ৫ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ডলার।

বছরের ব্যবধানে দেশটিতে পোশাক রপ্তানি কমেছে ১ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার বা ১৭৬ কোটি ডলার। অন্যদিকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে দেশটিতে ৯১ কোটি ১০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ। অর্থাৎ গত বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় এ বছরের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাবদ আয় কমেছে ৩ কোটি ১৬ লাখ ডলার। মানবজমিনের প্রধান খবর, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে কমছে পোশাক রপ্তানি’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধান দুই বাজার উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে সামগ্রিক পোশাক রপ্তানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে এক-তৃতীয়াংশ ও ইউরোপের বাজারে কমেছে সাড়ে ১৪ শতাংশ।

clipping path tech

দেশের মোট রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংশ যায় এ দুই বাজারে। এ দুটি বাজারে কোন কারণে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে তার বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে পড়ে

মঙ্গলবার তৈরি পোশাক খাতের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি বিজিএমইএর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান। তিনি বলেন, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি ও দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় তৈরি পোশাক খাতে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এর মধ্যে চলতি বছর ন্যূনতম মজুরি বোর্ড তথা নতুন মজুরি কার্যকর হলে পোশাক শিল্প আরও চাপে পড়বে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে কোনো সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। বিজিএমইএ নতুন বাজারগুলোতে রপ্তানি বাড়াতে কাজ করছে বলেও তিনি জানান।

বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম, ‘রেমিট্যান্সের বিপর্যয় আরো গভীর হয়েছে’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, গত আড়াই বছরে বিদেশের শ্রমবাজারে প্রায় ২৪ লাখ বাংলাদেশি নতুন করে যুক্ত হলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ তো বাড়েইনি, উল্টো আরও কমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৫৭ কোটি ২৬ লাখ ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে মাত্র ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। নিকট অতীতে কোনো মাসে এত কম রেমিট্যান্স প্রবাহ দেখা যায়নি। দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার শুরুটা গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে। ওই সময় আন্তঃব্যাংক লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দেয়া হয়। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোয় বিশেষ পরিদর্শন চালায় বাংলাদেশ ব্যাংক।পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি কমলেও ইউরোপে এখনও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ।

তবে এককভাবে বাংলাদেশের পোশাকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাজার জার্মানিতে রপ্তানি কমছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার পরও চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ইউরোপের বাজারে পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ৪ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।

পোশাক রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্বের অনেক দেশই এখন অর্থনৈতিক সংকটে আছে। সেসব দেশের মানুষ ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। খুব প্রয়োজন না হলে পোশাক কিনছে না

এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোশাক খাতে। গত অক্টোবরে দেশের পোশাক রপ্তানি প্রায় ১৪ শতাংশ কমে যায়। আগামী কয়েক মাস তৈরি পোশাক খাত নিয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হতে পারে। বিজিএমইএ পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতি এখন জটিলতার মধ্যে যাচ্ছে। বিশ্বে মূল্যস্ফীতি ও সুদহারসহ সবকিছুই অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলছে। একেক দেশে একেকভাবে মুদ্রানীতি বাস্তবায়িত হচ্ছে। অনেক দেশের মানুষ তাদের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব পোশাক খাতের ওপরই পড়ছে।

metafore online

প্রয়োজন না থাকলে তারা পোশাক কিনছে না।’ ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) তৈরি পোশাক রপ্তানি ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। এটি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ বেশি। ইইউর দেশগুলোর মধ্যে স্পেনে রপ্তানির প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি। এ দেশে ১৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ রপ্তানি বেড়েছে। এ ছাড়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে ফ্রান্সে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, নেদারল্যান্ডসে ১২ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং ইতালিতে ৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে ইউরোপে পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানিতে রপ্তানি ক্রমেই কমছে। জার্মানিতে চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলার। 

বছরের ব্যবধানে দেশটিতে রপ্তানি কমেছে ১১ দশমিক ৪৯ শতাংশ

তবে রপ্তানি আশানুরূপ না হওয়ার কারণ হিসেবে আলোচিত এ চার মাসে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলার। দেশটিতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কমেনি। একই সময়ে কানাডায় রপ্তানি ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে ৪৬৩ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। তবে এ সময়ে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে। বিজিএমইএ জানিয়েছে, প্রধান প্রধান বাজারগুলোতে রপ্তানি আয় কমলেও অপ্রচলিত বাজারগুলোতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের চার মাসে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি আয় হয়েছে ২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার, গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ২ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে এসব অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বেড়েছে ১৭ শতাংশের বেশি। অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে পোশাকের সবচেয়ে বেশি রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটিতে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর রপ্তানি বেড়েছে ৪৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এ ছাড়া জাপানে বেড়েছে ২৩ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের চার মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

সম্পর্কিত খবর

তামাকের কারণে বছরে ক্ষতি ৮ হাজার কোটি টাকা

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version