আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৬:১৯ এএম | অনলাইন সংস্করণ রানের পাহাড় দক্ষিণ আফ্রিকার
ইনিংসের শুরুর দিকেই দক্ষিণ আফ্রিকার দু’টি উইকেট তুলে নিয়ে চাপ সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতিপক্ষের ওপর ওই চাপ অব্যাহত রাখনে পারেনি টাইগাররা। ফলে যা হবার তাই হলো- কুইন্টিন ডি ককের শতক (১৭৪) ও ক্লাসেনের ঝড়ো ৯০ রানের সুবাধে রানের পাহাড় দাঁড় করিয়েছে প্রোটিয়ারা। নির্ধারিত ৫০ ওভারে তাদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ৩৮২ রান। মঙ্গলবার ওয়াংখেড়েতে টসে জিতে আগে ব্যাট করে পাহাড়সম এই রান সংগ্রহ করে প্রোটিয়ারা। তাই বাংলাদেশকে জিততে হলে গড়তে হবে রেকর্ড। এদিন অবশ্য ইনিংসের শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকাকে কাঁপিয়ে দেয় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লেতে তুলে নেয় জোড়া উইকেট। প্রথম আনন্দের উপলক্ষ এনে দেন শরিফুল ইসলাম।
ভাঙেন দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্বোধনী জুটি। স্ট্যাম্প ভেঙে রেজা হেন্ড্রিকসকে দেখিয়েছেন সাজঘরের পথ। ৬.১ ওভারে ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় প্রোটিয়ারা। রেজা আউট হন ১৯ বলে ১২ রান করে। অবশ্য ফিরতেন আরো আগেই। দ্বিতীয় ওভারেই হয়তো বাংলাদেশ পেয়ে যেত বাংলাদেশ প্রথম উইকেটের স্বাদ। যদি না তানজিদ তামিম তার ক্যাচ ছাড়তেন। ১.৫ ওভারে মিরাজের বলে স্লিপে ক্যাচ ছাড়েন তামিম। মার্করামকে ফিরিয়ে এই যুগলবন্দী ভাঙলেন সাকিব। ৩১তম ওভারে বোলিংয়ে এসে মার্করামকে ফেরান লিটনের ক্যাচ বানিয়ে।
আউট হবার আগে ৬৯ বলে ৬০ রান করে এই প্রোটিয়া ব্যাটার
১৬৭ রানে এসে পতন হয় তৃতীয় উইকেটের। চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে আগে ব্যাট করতে নেমে পাহাড়সম রানের সংগ্রহ গড়াটাকে যেন ভবিতব্য বানিয়ে ফেলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। বাংলাদেশের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের পঞ্চম ম্যাচেও তার ব্যতিক্রম হলো না। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে টাইগারদের বিপক্ষে নির্ধারিত ৫০ ওভারে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ৩৮২ রান করেছে প্রোটিয়ারা। দক্ষিণ আফ্রিকার রানের পাহাড়ে ওঠাতে প্রধান ভূমিকা রেখেছেন কুইন্টন ডি কক। ইনিংসের সিংহভাগ সময় ব্যাটিং করে ১৭৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন এ প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক-ওপেনার। শেষদিকে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৯০ রান করেন হেনরিক ক্লাসেন। এছাড়া, ৬০ রান করেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম। রানের পাহাড় দক্ষিণ আফ্রিকার
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই রেজা হেন্ড্রিকসকে ফেরানোর সুযোগ এসেছিল বাংলাদেশের সামনে। প্রোটিয়াদের বিপদে ফেলতে দ্বিতীয় ওভারেই স্পিনার এনেছিলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব। মেহেদি হাসান মিরাজের ওই ওভারের পঞ্চম বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন ০ রানে থাকা হেন্ড্রিকস। কিন্তু তানজিদ হাসান তামিম সেই ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি। তবে জীবন পেয়েও বেশিদূর এগোতে পারেননি। ষষ্ঠ ওভারে শরীফুল ইসলামের ফুললেংথ থেকে ভেতরের দিকে ঢোকা বল পুরোপুরি মিস করে বোল্ড হন প্রোটিয়া ওপেনার। রানের খাতা খোলার আগে জীবন পেয়ে ১৮ বলে ১২ রান করেন এ দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার। অষ্টম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে আরেক দফা আঘাত হানেন মিরাজ। ডানহাতি এ স্পিনারের ঘূর্ণিতে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন ৭ বল খেলে ১ রান করা রাসি ফন ডার ডুসেন।
ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো পাওয়ারপ্লেতে একাধিক উইকেট হারিয়েছে প্রোটিয়ারা
তবে পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার পরের দশ ওভারে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন ডি কক ও মার্করাম। শুরু থেকেই মারমুখী ব্যাটিং করা ডি কক সেঞ্চুরির যেমনি রানের গতি সচল রাখেন, তেমনি অন্য প্রান্তে সাবলীল মেজাজে থাকা মার্করামও তাল মিলিয়ে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন।
তৃতীয় উইকেটে ডি কক আর মার্করামের ১৩১ রানের জুটি ভাঙতে বিভিন্ন বোলারকে আক্রমণে এনে চেষ্টার ত্রুটি রাখছিলেন না সাকিব। শেষ পর্যন্ত তিনি নিজেই জুটি ভাঙেন। ৩১তম ওভারে তাকে উঠিয়ে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ দেন মার্করাম। ৬৯ বলে সাতটি চারে ৬০ রান করেন এ ডানহাতি ব্যাটার।মার্করামের বিদায়ের কিছুক্ষণ পরই সেঞ্চুরি তুলে নেন ডি কক। ৪৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর শতকে পৌঁছান ১০১ বলে। এটি চলমান ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রোটিয়া উইকেটরক্ষকের তৃতীয় সেঞ্চুরি। সেই সঙ্গে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকান হিসেবে বিশ্বকাপের এক আসরে তিনটি শতক হাঁকানোর কীর্তি গড়েন ডি কক। রানের পাহাড় দক্ষিণ আফ্রিকার
সেঞ্চুরিতে পৌছানোর পর রীতিমতো হাত খুলে তাণ্ডব চালানো শুরু করেন ডি কক। শতক পূর্ণ করার পরের ৩৯ বল খেলে ৭৪ রান করেন এ প্রোটিয়া ওপেনার। ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরির দিকেও ভালোমতোই এগোচ্ছিলেন তিনি। তবে শেষ অব্দি ডি ককের তাণ্ডব থামে ৪৬তম ওভারে। হাসান মাহমুদের বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে নাসুম আহমেদের হাতে ধরা পড়েন এ বাঁহাতি ব্যাটার। তবে তার আগে ১৪০ বলে ১৫ চার ও ৭ ছয়ে ১৭৪ রান করেন ডি কক। ডি কককে ফেরালেও অব্যাহত থাকে ক্লাসেনের ঝড়।
স্লগ ওভারে চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের তুলোধনা করে মাত্র ৪৯ বলে দুই চার ও আট ছক্কায় ৯০ রানের এক বিধংসী ইনিংস খেলেন এ ডানহাতি ব্যাটার। শেষদিকে ডেভিড মিলারের ঝড়ো ক্যামিওর ওপর ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহ ৩৮০ পেরোয়। মাত্র ১৫ বল খেলে এক বাউন্ডারি ও চারটি ছক্কায় ৩৪ রানে অপরাজিত থাকেন বর্ষীয়ান এ বাঁহাতি ব্যাটার।
সম্পর্কিত খবর:
ব্যর্থ মিশন শেষে দেশে ফিরেছেন টাইগাররা