আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:১৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১ এর বিচারক আবুল কাশেমের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন তিনি। পাশাপাশি চিকিৎসা ও ডিভিশন চেয়ে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক। আমানের আইনজীবী নজরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দুদকের মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়ে ঘোষিত রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ১৭ মিনিটের দিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করেন তিনি
এদিকে, সকাল থেকেই ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের খণ্ড খণ্ড মিছিল দেখা যায়। অন্যদিকে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করলে তাদের বের করে দেয় পুলিশ। মূলত, আমান উল্লাহ আমানের সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে আসেন তারা। গত ৭ আগস্ট দুর্নীতির মামলায় আমান উল্লাহ আমানের ১৩ বছরের কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী সাবেরা আমানের তিন বছরের দণ্ডের রায় বহাল রাখেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালতে রায় পৌঁছানোর ১৫ দিনের মধ্যে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর এ মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণের পর আমানের স্ত্রী সাবেরা আমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। গত ৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন।
একইসঙ্গে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারি দিন নির্ধারণ করেন আদালত। প্রসঙ্গত, সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আমান দম্পতির বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুদক। ওই বছরের ২১ জুন বিশেষ জজ আদালতের রায়ে আমানকে ১৩ বছরের ও সাবেরাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন। ২০১০ সালের ১৬ আগস্ট সেই আপিল মঞ্জুর করে তাদের খালাস দেন হাইকোর্ট। এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২৬ মে ওই রায় বাতিল করে হাইকোর্টকে মামলাটির আপিল পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত বিএনপি নেতা আমানউল্লাহ আমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত
উচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান আজ রবিবার দুপুরে আত্মসমর্পনের পাশাপাশি জামিন আবেদন করেন। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক আবুল কাসেম সে আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আমানউল্লাহ আমানের আইনজীবী সৈয়দ নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জামিন আবেদনের পাশাপাশি আরো তিনটি আবেদন করা হয়েছিল। জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিলে তাকে যেন জেলকোড অনুযায়ী কারাগারে ডিভিশন দেওয়ার আবেদন। অসুস্থ আমানউল্লাহ আমানকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে কারাগারে পাঠানোর আবেদন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় -বিএসএমএমইউ অথবা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার আবেদন। জামিন আবেদন বাদে বাকি তিনিটি আবেদনই আদালত মঞ্জুর করেছেন।’
জামিন নামঞ্জুরের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করা হবে বলে জানান এই আইনজীবী। জরুরি অবস্থার মধ্যে ২০০৭ সালের ৬ মার্চ আমান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন -দুদক। মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আমান দম্পতি ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৬৩ হাজার টাকার সম্পত্তি অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। এর মধ্যে আমান জ্ঞাত আয়ের বাইরে ৩ কোটি ৩১ লাখ ৭৫ হাজার ৯ টাকা এবং সাবেরা আমান ৬ কোটি ৬২ লাখ ৮৮ হাজার টাকার সম্পত্তি অর্জন করেন। ২০০৭ সালের ২১ জুন বিশেষ জজ আদালত আমানকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন। আর তার স্ত্রী সাবেরা আমানকে দেওয়া হয় তিন বছরের কারাদণ্ড। ওই রায়ের বিরুদ্ধে তারা হাইকোর্টে আপিল করেন।
২০১০ সালের ১৬ অগাস্ট হাইকোর্ট সে আপিল গ্রহণ করে তাদের খালাস দেন
হাইকোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে দুদক আপিল করলে ২০১৪ সালের ২৬ মে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বাতিল করে আমান দম্পতির আপিল পুনঃশুনানির নির্দেশ দেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত বেঞ্চে পুনঃশুনানির পর গত ৩০ মে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে আপিল খারিজ করে আমানের ১৩ বছর ও তার স্ত্রী সাবেরা আমানের তিন বছরের সাজা বহাল বহাল রাখা হয়। এ রায়ের অনুলিপি বিচারিক আদালত গ্রহণের ১৫ দিনের মধ্যে আমানউল্লাহ ও সাবেরাকে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। গত ৭ আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
নির্দেশনা অনুসারে গত ৩ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন সাবেরা। ঢাকার বিশেষ জজ-১ আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ৪ সেপ্টেম্বর লিভ টু আপিল করে সাবেরা জামিন চাইলে গত ৫ সেপ্টেম্বর আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত তাকে জামিন দেন। সে ধারাবাহিকতায় রবিবার আত্মসমর্পণ করে জামিন চান এ বিএনপি নেতা।
সম্পর্কিত খবর
ট্রাম্প আপিল আদালতকে ফেডারেল নির্বাচনের বিদ্রোহের মামলায় গ্যাগ অর্ডার থামাতে বলেছেন