আপডেট: নভেম্বর ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৫৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ মালয়েশিয়ায় নির্মাণাধীন ভবন
মালয়েশিয়ার পেনাং রাজ্যে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে তিন বাংলাদেশী শ্রমিক নিহত হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে আরো তিনজন। ধারণা করা হচ্ছে, এরা ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে আছে। এখন পর্যন্ত ১৮ শ্রমিকের মধ্যে ১২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। বুধবার সকালে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বারনামা এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। এতে বলা হয়, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার সময় পেনাং রাজ্যের জর্জ টাউন বায়ান লেপাসের বাতু মং-এ নির্মাণাধীন একটি লজিস্টিক গুদামের ছাদের ফ্রেম ধসে তিন নির্মাণ শ্রমিক নিহত হয়েছে।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি। খবর পেয়ে ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ (বোম্বা)- এর তিনটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রায় চার ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেছে। পেনাং রাজ্যের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি ডিরেক্টর জুলফাহমি সুতাজি বলেছেন, ধসে পড়া ধ্বংসস্তুপে কাঠামোর ওজন বেশি হওয়ায় উদ্ধার প্রচেষ্টা বেশ কঠিন হয়ে গেছে। সেখানে ভারী মালামাল সরিয়ে নিখোঁজদের উদ্ধার এর আগে ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ ডিপার্টমেন্টের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেখানে প্রায় নয়জন শ্রমিক আটকা পড়ে আছে।
বার্তা সংস্থা বারনামা আরো জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পর থেকে আজ বুধবার সকালেও তল্লাশি ও উদ্ধার কাজ এখনো চলছে।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে রওয়ানা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দূতাবাসের প্রেস সচিব সুখী আনদূল্লাহিল মারুফ।মালয়েশিয়ার পেনাং শহরে একটি নির্মাণাধীন ভবন ধসে এখন পর্যন্ত ৩ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। উদ্ধারকারীদের ধারণা এখনো ৪ শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) রাতে ভবন ধসে হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যম ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে।
দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধসে পড়া এই ভবনের সকল শ্রমিকই বাংলাদেশি ছিলেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাত ৯.৪৫ মিনিটের দিকে মালয়েশিয়ার পেনাংয়ে নির্মাণাধীন একটি ভবন ধসে পড়ে। সেই ঘটনার পর উদ্ধারকারীরা এখনও চারজন নিখোঁজ শ্রমিকের খোঁজে ধ্বংসস্তূপের নিচে সন্ধান করছেন। পেনাংয়ের ডেপুটি পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ ইউসুফ জান মোহাম্মাদ বলেন, এখনও পর্যন্ত উদ্ধারকারীরা আটকে পড়া ৯ শ্রমিকের মধ্যে পাঁচজনকে খুঁজে পেয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, এখানে কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সবাই ছিলেন বাংলাদেশি নাগরিক।
এখন পর্যন্ত, আমরা তিনজন নিহত ব্যক্তিকে শনাক্ত করেছি – দুজন যারা ঘটনাস্থলে মারা গেছেন এবং অন্য একজন হাসপাতালে মারা গেছেন।
গুরুতর আহত অন্য দুজনকে চিকিৎসার জন্য পেনাং হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদিকে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের শাইক ইসমাইল আলাউদ্দীন বলেছেন, তারা এখনও দুর্ঘটনায় হতাহতদের বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য অপেক্ষা করছেন।তারা সবাই বাংলাদেশি বলে পেনাংয়ের উপ-পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ উসুফ জান মোহাম্মদ জানিয়েছেন।
তবে হতাহতদের নাম-ঠিকানা এখনও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে উসুফ জান বলেন, নির্মাণাধীন ওই ভবনের ১২ মিটার দীর্ঘ এবং প্রায় ১৪ টন ওজনের একটি বিম ধসে পড়লে ঘটনার সূত্রপাত হয়। এর জেরে আরো ১৪টি বিম ভেঙে পড়ে। ওই সময় সেখানে কাজ করছিলেন ১৮ জন শ্রমিক।
তাদের মধ্যে নয়জন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন। উদ্ধারকর্মীরা পরে দুইজনের লাশ উদ্ধার করেন। আরেকজনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। উসুফ জান মোহাম্মদ বলেন, গুরুতর আহত আরো দুজনকে পেনাং হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ধ্বংসস্তূপে আটকে থাকা বাকি চারজনকে উদ্ধারে কাজ চলছে।
তবে ভেঙে পড়া কংক্রিট বিমের ওজনের কারণে উদ্ধার কাজ কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন পেনাং ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ বিভাগের উপ-পরিচালক জুলফাহমি সুতাজি । তিনি বলেন, ভারী কংক্রিটের কাঠামো সরিয়ে চাপা পড়া শ্রমিকদের কাছে পৌঁছাতে আরো বড় যন্ত্রপাতি প্রয়োজন।
মালয়েশিয়ায় নির্মাণাধীন ভবন ধসে ৩ বাংলাদেশির মৃত্যু রাতে নির্মাণাধীন ভবন ধসে পড়ার বিকট শব্দ শুনতে পান ঘটনাস্থলের আশেপাশের এলাকায় থাকা শ্রমিকরাও।
তাদের মধ্যে ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইখতিয়ার নামে এক বাংলাদেশি শ্রমিক বলেন, ঘটনাটিকে ভূমিকম্পের মত মনে হয়েছিল তার। আমি পাশের একটি সাইটে কাজ করছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ হল। ভবনটির মাঝের অংশে বিশাল কংক্রিটের বিম ভেঙে পড়ল। অন্যদের নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখি, বিমগুলো ভেঙে ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়েছে।
ঘটনাস্থলের পাশেই চোখেমুখে ভয় আর দুঃশ্চিন্তা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ৫০ বছর বয়সী মহসির। তাকে সাইটের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।দুর্ঘটনা থেকে তিনি বেঁচে গেলেও বন্ধুদের ভাগ্য সহায় হয়নি বলে জানান মহসির। মালয়েশিয়া স্টারকে তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে একটি দল নামাজ পড়তে গিয়েছিল। আর অন্য দলটি সাইটে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আমি সাইট থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরপরই ফোন পেয়ে এখানে ছুটে আসি।
ঠিক কারা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছেন বা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন, সেটি নিশ্চিত না হলেও তাদের সবাইকে চিনতে পারবেন বলে জানান মহসির। তিনি বলেন, ৩২ বছর ধরে তিনি মালয়েশিয়ায় আছেন। তবে এই সাইটে কাজ শুরু করেছেন কয়েক মাস আগে। ৪৩ বছর বয়সী আরেক শ্রমিক মহিদুল ইসলাম দুর্ঘটনার আগেই সাইট থেকে চলে আসতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন।
বাংলাদেশি এই শ্রমিক বলেন, ওয়্যারহাউসটির সবার উপরের তলায় আরও চারজনের সঙ্গে কাজ করছিলেন তিনি। মাঝে বিরতির সময় হলে সেখান থেকে নেমে আসেন। “আমরাদের অধিকাংশই এই প্রকল্পে তিন মাস ধরে কাজ করছে। আমার খুব খারাপ লাগছে, আমার বন্ধুদের হারাতে হল।”
Bangla News | 24NBN