আপডেট :২৫ জুন ২০২১, ০৯:৫৮ এএম | অনলাইন সংস্করণ ধর্ষণচেষ্টার
ধর্ষণচেষ্টার
কাই সিনেমার নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টা অভিযোগ অস্বীকার করছেন রিমান্ডে থাকা আসামিরা। ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমিকে বৃহস্পতিবার রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।রিমান্ডের প্রথম দিন তারা সাভার থানার পুলিশের কাছে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। তারা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টায় জড়িত নন বলে দাবি করেন। এ তথ্য জানিয়েছেন মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিরুলিয়ার ঢাকা বোট ক্লাবে ৮ জুন রাতে পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে বলে নায়িকার অভিযোগ। ১৩ জুন নাসির ও অমি ছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও চারজনের বিরুদ্ধে সাভার থানায় মামলা করেন তিনি।
বুধবার সাভার থানার পুলিশ ওই মামলায় তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয়।
মলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল কাফী বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, পরীমনির করা মামলার খুঁটিনাটি বিষয়ে বৃহস্পতিবার আসামি নাসির উদ্দিন ও অমিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি বলেন, আসামিরা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। পুলিশের কাজ হলো, সেদিন কী ঘটেছিল, তা তদন্ত করে বের করা। সেভাবেই তদন্ত চলছে।প্রসঙ্গত, ১৩ জুন সন্ধ্যায় ফেসবুক পোস্টে পরীমনি অভিযোগ করেন— তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেন পরীমনি। ১৩ জুন রাতে বনানীর নিজ বাসায় সাংবাদিকদের তিনি জানান, গত ৮ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমিকে সঙ্গে নিয়ে আশুলিয়ার একটি ক্লাবে যান।
সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজনের সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। ওই ব্যক্তিদেরই একজন হঠাৎ জোর করে তার মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরেন এবং ধর্ষণের চেষ্টা করেন। পর দিন ১৪ জুন সাভার থানায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও অমির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও চারজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন পরীমনি। ওই দিন বিকাল ৩টার দিকে রাজধানীর উত্তরা থেকে নাসির ও অমি এবং তিন নারীসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় আসামিদের কাছ থেকে বিদেশি মদ ও ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। মাদক মামলায় গত ১৫ জুন নাসির ও অমির সাত দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন আদালত। আর ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টায় বুধবার তাদের ৫ দিন করে রিমান্ড দেওয়া হয়।
ধর্ষণচেষ্টার
মাদকের মামলায় দ্বিতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর হওয়ার পর চিত্রনায়িকা পরীমনি তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
চার দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আজ মঙ্গলবার পরীমনিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে (সিএমএম) হাজির করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এই চিত্রনায়িকাকে আবার পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি চাওয়া হয়। শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরীমনির রিমান্ড শুনানি উপলক্ষে আজ ঢাকার সিএমএম আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আদালতের এজলাস কক্ষে নেওয়ার সময় দুজন নারী পুলিশ কর্মকর্তা পরীমনির দুই হাত ধরে রাখেন। রিমান্ড শুনানি শেষে একই কায়দায় তাঁকে হাজতখানায় নেওয়া হচ্ছিল।
এ সময় পরীমনি আদালতের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘একটা মিথ্যা মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। কী করতেছেন আপনারা? আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর আপনারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতেছেন।’ ক্ষুব্ধ কণ্ঠে এ কথা বলার পর পরীমনিকে সাততলার লিফটের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে পরীমনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে মামলা দেওয়া হয়েছে, তা ১০০ ভাগ মিথ্যা মামলা।’পরীমনি এ কথা বলে লিফটের ভেতর ঢুকে যান। তখনো তিনি কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় কয়েকজন নারী পুলিশ সদস্য তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ান। তখন চিৎকার করে পরীমনি বলেন, ‘আমাকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। আমাকে ওপেন সার্চ করেন।’ লিফট থেকে নামার পর আদালতের হাজতখানার সামনের ফটকে আসার পর পরীমনি আবার কথা বলতে থাকেন। চিৎকার করে তিনি বলতে শুরু করেন, ‘আপনারা মিডিয়া তাকায় তাকায় দেখেন আমাকে। আমাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। আমি জীবনে…।’
পরীমনির এই বক্তব্যের পর তাঁর সঙ্গে থাকা নারী পুলিশ সদস্যরা তাঁকে নিয়ে দ্রুত হাজতখানার দিকে নিয়ে চলে যান।
এরপর বেলা তিনটার পর পরীমনিকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় সিআইডি পুলিশ। চিত্রনায়িকা পরীমনি গত জুনে রাজধানীর অদূরে বিরুলিয়ায় ঢাকা বোট ক্লাবে তাঁকে হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণচেষ্টা করা হয়েছে বলে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে আলোচনায় আসেন। পরে তাঁর মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ ও তুহিন সিদ্দিকী ওরফে অমিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরে জামিনে মুক্তি পান আবাসন ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন।৪ আগস্ট রাজধানীর বনানীতে পরীমনির বাসায় অভিযান চালায় র্যাব। কয়েক ঘণ্টার অভিযান শেষে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁর বাসা থেকে বিদেশি মদের পাশাপাশি আইস ও এলএসডি নামের মাদক পাওয়া গেছে। এই অভিযোগে বনানী থানায় মামলা করে র্যাব। সেই মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যে ধারায় পরীমনির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা প্রমাণিত হলে তাঁর সর্বোচ্চ পাঁচ বছর কারাদণ্ড হতে পারে।শুনানির শুরুতে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবদুল্লাহ আবু পরীমনিকে কেন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার, তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন।
ধর্ষণচেষ্টার
তিনি বলেন, পরীমনির বাসা থেকে নতুন ধরনের মাদক আইস, এলএসডি পাওয়া গেছে।
এই মাদকের উৎস কী, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির বক্তব্য শেষ হলে পরীমনির আইনজীবী মজিবুর রহমান আদালতে বলেন, পরীমনি জনপ্রিয় একজন নায়িকা। আমেরিকার প্রখ্যাত বাণিজ্য সাময়িকী ফোর্বসের প্রকাশ করা এশিয়ার ১০০ ডিজিটাল তারকার তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশি এই অভিনেত্রীর। তাঁর প্রতি অন্যায় আচরণ করা হচ্ছে। তাঁকে তো চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নতুন করে তো তাঁকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। পরীমনির আইনজীবী যখন আদালতের কাছে এসব কথা বলছিলেন, তখন কাঁদতে থাকেন পরীমনি। কয়েক মিনিট ধরে চলে তাঁর কান্না।
ধর্ষণচেষ্টার
উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে পরীমনিকে আবার দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত।লাল-কালো চেক শার্ট, ব্লু জিনস আর সাদা কেডস পরা পরীমনিকে ছয় দিন আগে বনানীর বাসা থেকে আটক করে নিয়ে যায় র্যাব। পরদিন আদালতে হাজির করার সময় একই পোশাকে ছিলেন তিনি। চার দিনের রিমান্ড শেষে মঙ্গলবার আবার যখন এই চিত্রনায়িকাকে আদালতে নেওয়া হয়, সেই একই পোশাকে তাঁকে দেখা যায়।সিআইডির হেফাজতে থাকা পরীমনির পোশাকের এই বিষয়টি আদালতে শুনানির প্রসঙ্গ হয়েছে। তাঁর আইনজীবী মজিবুর রহমান আদালতে বলেছেন, পরীমনিকে তাঁর স্বজনদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ জন্য তাঁকে কাপড়চোপড়ও সরবরাহ করতে পারছেন না স্বজনেরা। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে পরীমনি একই পোশাক পরে আছেন।