আপডেট: ৮ অগাস্ট ২০২০, ০৮:৩২এএম| অনলাইন সংস্করণ তোপের মুখে পড়লেন রিয়া
বলিউডের জনপ্রিয়ন অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুত নেই দেখতে দেখতে এক মাস হয়ে গেল। স্মৃতি ফিকে হচ্ছে ক্রমশ। মাঝের এই ৩০টা দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিলেন সুশান্তের প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী। তাকে নিয়ে ট্রোল, কদর্য মন্তব্যে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। এক মাস পর, মঙ্গলবার মুখ খুলেছেন রিয়া। ইনস্টাগ্রাম পোস্টে সুশান্তকে নিয়ে উজাড় করে দিয়েছেন তার ভালবাসা।
এই পোস্ট বরুণ ধাওয়ানের মতো সেলিব্রিটি যেমন লাইক করেছেন তেমনই নেটিজেনদের একাংশ রিয়ার এই ভালবাসা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি। কেউ লিখেছেন, ‘সুশান্ত শুধু অঙ্কিতার, কৃতি শ্যানন বা রিয়া কেউ সুশান্তের ভালবাসা ছিলেন না। রিয়া তুমি কেন এসব লিখে সময় নষ্ট করছো?’
কেউ সরাসরি প্রশ্ন করেছেন রিয়াকে, ‘এত যদি ভালবাসা তাহলে সুশান্তের খারাপ সময়ে ওকে ছেড়ে চলে যেতে পেরেছিলে কেমন করে? সুশান্তকে কেন ৫১টা সিম বদলাতে হয়েছিল? তুমি পুলিশকে বলছো না কেন রিয়া?’ কেউ আবার লিখেছেন, ‘রিয়া, তোমার মতো মেয়ের জন্য সুশান্তকে আজ মরতে হল। তুমি ওই মহেশের সঙ্গেই থাকো। তোমার ক্যারিয়ারে আর কিছু হবে না।’ পোস্টে কী লিখেছেন রিয়া?
লিখেছেন, “চাঁদ, তারা, আর ওই সুবিশাল মহাকাশ… তোমাকে দু’হাত বাড়িয়ে স্বাগত জানিয়েছে নিশ্চয়।
এখন নিশ্চয় অনেক শান্তিতে আছ তুমি… আজ মনে পড়ে জান, খসে পড়া তারা, যার নিজের কোনও আলো নেই… তাকেও কীভাবে শুধুমাত্র নিজের আনন্দ দিয়ে আলোকিত করার ক্ষমতা রাখতে তুমি। আজ তুমি সেই খসে পড়া তারা। আমার তারা। যে তারার জন্য আমি অপেক্ষা করতেও রাজি… আজীবন…”।
বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মতো সাধারণ মানুষের কাছে সুপরিচিত ছিলেন না তার বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী। মি. রাজপুতের মৃত্যুর পরেই মিজ. চক্রবর্তীর নাম জানতে পারেন সাধারণ মানুষ। গণমাধ্যম আর সামাজিক মাধ্যমগুলোয় প্রকাশ পেতে থাকে মডেল ও অভিনেত্রী বাঙালি নারী রিয়ার নাম।
প্রশ্ন তোলা শুরু হয় তিনি কেন সামনে আসছেন না! জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলি প্রচার করতে শুরু করে, ”কোথায় রিয়া” ইত্যাদি শিরোনাম। আর কিছুদিন পর থেকে তার দিকেই আঙ্গুল তোলা শুরু হয়, যে তিনিই আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন সুশান্তকে। অভিযোগ ওঠে সুশান্তের মৃত্যুর পর তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়েছেন তিনি। একদিকে যখন অভিযোগ তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে রিয়া চক্রবর্তীকে একেবারেই দোষী বলে বিচার করে ফেলা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে।
তাকে ‘হত্যাকারী’, গোল্ড-ডিগার’, ‘উইচ’ বা ডাইনি, ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হতে থাকে, অন্যদিকে কেউ আবার তাকে ধর্ষণ করার হুমকি দেয় কেউবা আবার রিয়াকে আত্মহত্যা করতে নির্দেশ দেয়। রিয়া চক্রবর্তীকে নিয়ে কী ধরনের কথা লেখা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে, তার ওপরে নজর রেখেছিলেন ভারতে বিবিসি-র নারী বিষয়ক সংবাদদাতা দিভ্যা আরিয়া। “রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে শুধু সুশান্ত সিং রাজপুতের পরিবার একটা অভিযোগ দায়ের করেছে।
তার দোষ আছে কি না, সেই বিচারে যাচ্ছি না।
কিন্তু আদালতের বিচার তো শুরুই হয় নি – তদন্তই এখনও সবে আরম্ভ হয়েছে — কিন্তু ইতিমধ্যেই সুশান্ত সিং রাজপুতকে আত্মহত্যায় প্ররোচনায় রীতিমতো দোষী বানিয়ে ফেলেছে সামাজিক মাধ্যম এবং এক শ্রেণীর গণমাধ্যমও,” বলছিলেন দিভ্যা আরিয়া। তিনি বলছেন যে সব মন্তব্য করা হয়েছে তা থেকে ভারতীয় সমাজের একাংশের নারী বিদ্বেষ যেমন বেরিয়ে আসছে, তেমনই কারও মানসিক অবসাদ হলে যে কী কী তিনি করতে পারেন, তা নিয়ে জ্ঞানের অভাবও দেখা যাচ্ছে।
“এছাড়া বলিউডি নাটক – যার ওপরে ভারতের গণমাধ্যম অনেকটাই নির্ভর করে, তাও রয়েছে এখানে। শুধু যে সাধারণ মানুষ এসব বলছেন, তা নয়। সুশান্ত সিংয়ের পরিবার, বন্ধুরা এবং কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কথা বলছেন রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে,” বলছেন দিভ্যা আরিয়া। সুশান্তের মৃত্যুর প্রায় দেড় মাস পরে তার বাবা বিহার পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন রিয়া এবং তার পরিবার এবং আরও কয়েকজনের নামে।
অভিযোগ দুটি: এক, তারাই সুশান্তকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছেন। আর দুই, তিনি মারা যাওয়ার পরে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা সরিয়েছেন। বিহার পুলিশ আর মুম্বাই পুলিশের মধ্যে তদন্ত নিয়ে শুরু হয় অভূতপূর্ব টানাপড়েন। এরপরেই বিহার সরকার আবেদন করে যে এই মৃত্যুর তদন্ত করুক কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো বা সিবিআই। কেন্দ্রীয় সরকার তাতে সায় দেয়ার পর তদন্ত ভার তুলে দেওয়া হয়েছে সিবিআইয়ের হাতে।