প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৭: ৪৪ | অনলাইন সংস্করণ হত্যা মামলার নথি সংরক্ষণ
হত্যা মামলার নথি সংরক্ষণ
ঢাকার উপকণ্ঠ সাভারে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে সেলিমা খান মজলিশ নামের এক নারী খুন হন ২০১১ সালে। চার বছর তদন্ত শেষে ২০১৫ সালে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) হত্যাকাণ্ডে কারও সম্পৃক্ততা না পেয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়। এতে পরিবারের কেউ নারাজি আবেদন করেননি। তাই আদালত মামলার সব নথি সাভার থানায় পাঠিয়ে দিয়ে তা ধ্বংস করার নির্দেশ দেনতবে পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মামলাটির অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দেয়। পিবিআই মামলার তদন্তভার নেওয়ার পর সংশ্লিষ্ট আদালত, থানা ও সার্কেল অফিসে গিয়েও সিডিসহ মামলার কোনো নথি পায়নি। সেলিমা খান আওয়ামী লীগের নেতা প্রয়াত শামসুদ্দোহা খান মজলিশের স্ত্রী।
২০১১ সালের ১৪ জুন সাভারের দক্ষিণপাড়ায় নিজ বাসায় দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে প্রাণ হারান তিনি।
শুধু সেলিমা খান মজলিশই নন, এমন অনেক হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটিত না হওয়ার পরও চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়। পরে নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নথি ধ্বংস করা হলেও বিশেষ পরিস্থিতিতে নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা মামলার পুনঃ তদন্তের উদ্যোগ নেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে মামলা পরিচালনায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র পাওয়া যায় না। নতুন করে মামলার তদন্ত শুরু হলেও কোনো সূত্র (ক্লু) থাকে না।পুলিশ সদর দপ্তরে পিবিআইয়ের পাঠানো আবেদনে বলা হয়েছে, হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন হয় না, আদালতের নির্দেশে এমন মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে পিবিআই। পুলিশ প্রবিধানের (পিআরবি) সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী আদালতের বিচারপ্রক্রিয়া শেষে নিষ্পত্তি করা মামলার সব নথি থানা থেকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
সেখান থেকে এসব নথি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের রেকর্ড রুমে জমা হয়। বিচারের পরও কোনো কোনো ক্ষেত্রে হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটিত হয় না। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মামলার তদন্ত পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজন হলে মামলার মূল নথিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অজ্ঞাত কারণে খুঁজে পাওয়া যায় না। ফলে মামলার তদন্তকাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।এ অবস্থায় পিআরবি ১১০১ (এ) এবং ১১০১ (১), (২) ও (৩) বিধি, পিআরবি (ভল-২) ও অ্যাপেন্ডিক্স (৩) সংশোধনের কথা বলেছে পিবিআই। জানতে চাইলে পিবিআইয়ের প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি) বনজ কুমার প্রথম আলোকে বলেন, খুনের ঘটনায় মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর বিশেষ পরিস্থিতিতে স্বজনেরা কোনো কোনো মামলা রহস্য উদ্ঘাটনে অধিকতর তদন্তের আবেদন করেন।
তাই এ ধরনের মামলার সব নথি যাতে ৩০ বছর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সংরক্ষণ করা যায়, সে ব্যাপারে আইজিপি (পুলিশের মহাপরিদর্শক) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পরামর্শে পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন করেছে পিবিআই।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, আইজিপি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয় থেকে পিআরবি সংশোধন করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো চিঠিতে পিবিআইয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, সুনির্দিষ্ট কারণে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটন করতে না পারায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন (সত্য) দাখিল করা হয়।
কিন্তু পরে পুলিশ বিভিন্ন সূত্র থেকে কিছু হত্যা মামলার রহস্য উদ্ঘাটনের সূত্র পেয়ে যায়। সেই বিবেচনায় কেবল অনুদ্ঘাটিত হত্যা মামলার নথি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের রেকর্ড রুমে পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে একটি আলাদা রেজিস্ট্রার (নিবন্ধন) রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। পুলিশ সুপার এই রেজিস্ট্রার তাঁর অধীনের কর্মকর্তাকে দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করবেন। এই রেজিস্ট্রারের নাম হবে ‘ট্রাইড মার্ডার কেস (আনডিটেকটেড) রেজিস্ট্রার’। এ পটভূমিতে খুনের যেসব মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়, সেগুলোর নথি অন্তত ৩০ বছর সংরক্ষণ করার উদ্যোগ নিয়েছে পিবিআই। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত ১৫ অক্টোবর পুলিশ সদর দপ্তরে এ-সংক্রান্ত একটি আবেদন পাঠানো হয়েছে। পিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে চূড়ান্ত প্রতিবেদন হয়েছে এমন খুনের মামলার নথি ১৪ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা হয়।
ঢাকায় ব্যবসায়ীর চোখে বালু ছুড়ে ১৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে গ্রেপ্তার ৬