আপডেট : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৫:১৬ এএম | অনলাইন সংস্করণ কব্জি বিচ্ছিন্ন করে ভিডিও ভাইরাল
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে প্রকাশ্যে এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্নের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় সাতজন গ্রেফতার হয়েছে। শুক্রবার রাজধানী ও বাগেরহাটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। শনিবার র্যাবের পক্ষ থেকে এক ক্ষুদে বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। গ্রেফতার সাতজনের মধ্যে তিনজনের পরিচয় প্রকাশ করেছে র্যাব। তারা হলেন- রাফাত, তুষার ও আহমেদ। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান জানান, সম্প্রতি মোহাম্মদপুরে আরমান নামের এক যুবকের ওপর হামলার পর তার হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে সন্ত্রাসীরা। কব্জি বিচ্ছিন্নের ভিডিও ধারণ করে তারা ফেসবুকে ভাইরাল করে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
লোমহর্ষক ঘটনা নিয়ে সিসিটিভির একটি ভিডিও গণমাধ্যমকে পাঠিয়েছে র্যাব
এতে দেখা যায়, প্রকাশ্যে এক ব্যক্তিকে ধারালো চাপাতি দিয়ে দুজন মিলে কোপাচ্ছে। পরে তারা চলে যায়। এ ঘটনার বিস্তারিত জানাতে আজ সংবাদ সম্মেলন করার কথা রয়েছে র্যাবের। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে এক যুবকের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালকারী সন্ত্রাসী রাফাত, তুষার ও আহমেদসহ সাতজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাবের দাবি, পূর্ব শত্রুতার জেরে ওই যুবকের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে তাদের বাগেরহাট ও রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। এসব ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরী ও মামলা হয়। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার প্রবণতাও লক্ষ্য করা গেছে। এর প্রেক্ষিতেই গত ২৭ আগস্ট একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আরমান নামে এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে। ওই ঘটনায় ভুক্তভোগী নিজে বাদী হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদ থানায় একটি হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
’ মামলার পর তদন্তে নামে র্যাব
গত রাতে র্যাব রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন আহমেদ খান (২২), মো. হাসানে ওরফে গুটি হাসান (২৪), মো. হানিফ হোসেন জয় (২৪), রমজান (২৩), মো. রাজুকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্যমতে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় এক যুবকের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে তার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরালকারী সন্ত্রাসী মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাত (২৩), তুষার হাওলাদারকে (২৩) বাগেরহাট থেকে র্যাব-৬ এর একটি দল গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে স্বীকার করেছে। গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য। তাদের গ্রুপে প্রায় ১৫-২০ জন সদস্য রয়েছে। এই সন্ত্রাসী গ্যাংটি রাফাত, তুষার ও আনোয়ারের নেতৃত্বে ৪-৫ বছর যাবৎ পরিচালিত হয়ে আসছিল। গ্রেফতাররা মোহাম্মদপুর, আদাবর, বেড়িবাধ ও ঢাকা উদ্যান এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতিসহ অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত। সন্ত্রাসীরা একাকী পথচারীদের আকস্মিকভাবে ঘিরে ধরে চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে দ্রুত পালিয়ে যায়।
তারা বিভিন্ন সময় চাঁদাবাজিসহ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঢাকা উদ্যান, আদাবর, শ্যামলী, মোহাম্মদপুরসহ আশেপাশের এলাকায় দেশীয় ধারালো অস্ত্র দিয়ে মারামারিসহ বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাত
পূর্ব শত্রুতার জের ধরে গ্রেফতার তুষার ভুক্তভোগী আরমানের বাম হাতে চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে এবং গ্রেফতার রাফাত ধারালো চাপাতি দিয়ে কোপ দিয়ে ভুক্তভোগী আরমানের ডান হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন করে বলে জানা যায়। এরআগে তারা বিভিন্ন সময়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ভুক্তভোগীকে একই কায়দায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা করে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিচ্ছিন্ন করতো। এরপর এ সকল নৃশংসতার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতো। গ্রেফতার মো. রাফিদুল ইসলাম রানা ওরফে রাফাতের নেতৃত্বে মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় ৪-৫ বছর যাবৎ একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করতো। সে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সামনে থেকে নেতৃত্ব প্রদান করতো ও এই গ্রুপের প্রধান হিটম্যান হিসেবে কাজ করতো।
এ ঘটনার পর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে সে প্রথমে ফরিদপুরের একটি মাজারে গিয়ে আত্মগোপন করে। সেখানে কয়েকদিন অবস্থান করার পর পুনরায় গ্রেফতারের আশংকায় ওই স্থান থেকে আত্মগোপনের উদ্দেশ্যে বাগেরহাটে যায়। গ্রেফতার তুষার হাওলাদার একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের একজন অন্যতম সদস্য। সে গ্রেফতারকৃত রাফাতের নির্দেশনা অনুযায়ী ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমের পরিকল্পনা করতো বলে জানা যায়। গ্রুপের অন্যান্য সদস্যসহ তারা সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতো। ঘটনার পর সে রাফাতের সঙ্গে আত্মগোপন করে এবং বাগেরহাট থেকে র্যাব গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে মারামারি, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির অভিযোগে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
সম্পর্কিত খবর
৭৫ কেজি গাঁজাসহ গ্রেফতার ৩