দিনাজপুরের খানসামায় আশ্বিনের শুরুতে টানা চার দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। গত তিন দিনের ভারি বৃষ্টিপাতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায়, যান ও মানুষের চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না উপজেলাবাসী। এ ছাড়া টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাতের ফলে তলিয়ে গেছে এলাকার নিম্নাঞ্চলের কিছু কিছু আমন ধানের জমি। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী, দিনমজুর ও দৈনন্দিন কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষ। দুর্ভোগে পড়েছে চাকরিজীবী ও স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ওসি আসাদুজ্জামান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪৮ মিলিমিটার। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ছিল ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। তবে এই বৃষ্টিপাত রোববার থেকে ধীরে ধীরে কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও কোনোভাবেই কমছে না।
উপজেলার হলদিপাড়ার ভ্যানচালক আসাদুল বলেন, বৃষ্টির কারণে যাত্রী নেই বললেই চলে। ফলে আয়-রোজগার কমে গেছে। পরিবার নিয়ে টেনশনে পড়েছি।
মজিবর নামে আরেক ভ্যানচালক বলেন, পেটের দায়ে সকালে ভ্যান নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছি। রাস্তায় মানুষজন কম তাই ইনকাম নেই। স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করি। বৃষ্টির কারণে সেটাও নেই। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।
সুজন নামে এক চায়ের দোকানদার জানান, চারদিন ধরে যে পানি পড়েছে, এতে আমার চায়ের কাস্টমার কমে গেছে।
অটোরিকশা চালক সুমন বলেন, বৃষ্টির কারণে কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ায় আমার আয়ও কমে গেছে। প্রতিদিন যেখানে কমপক্ষে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আয় করে থাকি। সেখানে বৃষ্টির কারণে ইনকাম নেই, তাই বসে আছি। আকাশের যা অবস্থা আজকেও সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে।
কাঠমিস্ত্রি কনক বলেন, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে একটি বন্ধ দোকানে আটকে গেছি। বৃষ্টির কারণে আজ আর কাজে যাওয়া হবে না। দিন হাজিরা হিসেবে আমি ৫০০ টাকা করে আয় করি। এভাবে বসে থাকা মানেই আমার লস।
উপজেলা গেটের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম জানান, বৃষ্টিতে ভিজে মানুষ কাজে আসতে চান না। টানা বৃষ্টির কারণে বিক্রি অর্ধেকেরও কম হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সিদ্দিকুর জামান বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে নদীগুলোর খননকাজ করায় বন্যার আশঙ্কা কম। নদী খননের বালু নদীর উভয় পাড়ে রাখায় সেগুলো রক্ষা বাঁধ হিসেবে কাজ করেছে। যেভাবে এই কয়েক দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে, তাতে অন্তত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কথা। তবে আরও দু-একদিন এভাবে বৃষ্টিপাত হলে নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি যাবে কিংবা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।