আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:০ এএম | অনলাইন সংস্করণ ছাত্রলীগ নেতার গ্রেপ্তার চেয়ে বিক্ষোভ
সজল কুমার ঘোষ শিক্ষার্থী নন। অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও তাঁর ছাত্রত্ব নেই। তিনি বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। শুধু দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এক দশক ধরে বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) আবাসিক হোস্টেলের একটি কক্ষ দখল করে বসবাস করছেন। তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সজল কুমার ঘোষের গ্রেপ্তারের দাবিতে গতকাল বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস বর্জন করে প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে শহরের সাতমাথা-বনানী সড়ক অবরোধ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভের পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এর আগে আইএইচটির শিক্ষার্থীরা গত মঙ্গলবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সামনে সাতমাথা-বনানী সড়ক অবরোধ করে লাঠি হাতে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে গা ঢাকা দিয়েছেন অভিযুক্ত সজল কুমার ঘোষ
তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, অস্ত্র আইনসহ একাধিক মামলা আছে। সজলের বিরুদ্ধে আইএইচটির শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে হোস্টেলের ডাইনিং নিয়ন্ত্রণ করে প্রতি মাসে লাখ টাকার বাণিজ্য, হোস্টেলে সিট বাণিজ্য, ব্যবহারিক ও মৌখিক পরীক্ষায় পাস করে দেওয়ার কথা বলে বাণিজ্য, ইন্টার্নশিপের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি, প্রতিদিন ‘হাজিরা’ প্রথার নামে শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে নির্যাতন, শিক্ষাসফরের নামে ৭০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তোলা প্রায় ৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ, হোস্টেলকক্ষে মদের আসর বসানোসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থী ও জেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সজল কুমার ঘোষের বাড়ি পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার দিলপাশায়। প্রায় এক যুগ আগে বগুড়ায় আসেন। নিজেকে একসময় একটি বেসরকারি রোগনির্ণয়কেন্দ্রের রেডিওলজিস্ট হিসেবে পরিচয় দিতেন।
ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে ২০১৬ সালের দিকে বগুড়ার আইএইচটির আবাসিক হোস্টেলে একটি কক্ষ দখল করে আস্তানা গাড়েন। ওই বছর রনি নামের এক শিক্ষার্থীকে ছুরিকাহত করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাইমুর রাজ্জাকের সঙ্গে সখ্যর সুবাদে ২০১৬ সালে জেলা ছাত্রলীগে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়ে যান। এরপর ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে আইএইচটি ক্যাম্পাসে ‘নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা’ করেন। আইএইচটি ছাত্রাবাসের ২১৮ নম্বর কক্ষে নিয়মিত বহিরাগতদের নিয়ে মাদকের আড্ডা বসানোর অভিযোগও আছে তাঁর বিরুদ্ধে। বগুড়ায় ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সড়কে লাঠি হাতে বিক্ষোভ শিক্ষার্থীদের ফিজিওথেরাপি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ছাত্রাবাসে ১৫০ জন আবাসিক শিক্ষার্থী থাকেন।
তাঁদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ডাইনিংয়ের খাবার বাবদ ১ হাজার ১০০ টাকা হিসাবে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা তোলেন সজল কুমার ঘোষ ছাত্রলীগ নেতার গ্রেপ্তার চেয়ে বিক্ষোভ
তিন বেলা উন্নত খাবার সরবরাহের কথা থাকলেও ১৫০ শিক্ষার্থীর জন্য শুধু হলুদ দিয়ে চার কেজি চালের খিচুড়ি রান্না করেন। এসব খিচুড়ি মুখে দিতে পারেন না শিক্ষার্থীরা। সকালে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাইরে নাশতা সারেন। অন্য দুই বেলায়ও নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করে সিংহভাগ টাকা পকেটে ভরেন সজল ঘোষ। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সজল কুমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি। গতকাল বুধবার দুপুরে বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি চত্বরে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা সজল কুমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ কর্মসূচি।
গতকাল বুধবার দুপুরে বগুড়ার ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি চত্বরেছবি: প্রথম আলো মাহমুদুল ইসলাম নামের তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থীর অভিযোগ, পরীক্ষায় ফরম পূরণের সময় ক্লাসে অনুপস্থিতির অজুহাত তুলে সজল ঘোষ প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনকে ম্যানেজ করে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ আটকে দিতেন। এরপর জনপ্রতি ১০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দিতেন।
এ ছাড়া ইন্টার্নশিপ করতে সজল ঘোষকে ৩ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। সম্প্রতি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য জনপ্রতি ৫০০ টাকা হিসেবে সাড়ে চার লাখ টাকা চাঁদা তোলা হয়। লাখখানেক টাকা খরচ করে এ টাকার পুরোটাই আত্মসাৎ করেন সজল। এ ছাড়া শিক্ষাসফরের জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা চাঁদা তোলেন সজল ঘোষ। ৭০০ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা চাঁদা উঠলেও শিক্ষাসফরে নিয়ে যাননি তিনি।
মো. রিফাত নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতিরাতেই সজলের দখলে থাকা কক্ষে মাদকের আসর বসে
প্রতিদিন ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসের তেঁতুলতলায় তিনি চেয়ার নিয়ে বসতেন। ক্লাস শেষে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে তাঁর সঙ্গে দেখা করে সালাম দিতে হতো। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে শারীরিক নির্যাতন করা হতো। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কোনো কর্মসূচি থাকলেই হোস্টেলের শিক্ষার্থীদের মিছিলে ভাড়া দিয়ে নেতাদের কাছ থেকে চাঁদা নিতেন সজল কুমার ঘোষ। ছাত্রলীগ নেতার গ্রেপ্তার চেয়ে বিক্ষোভ
আইএইচটি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের জন্য ১৯৭৮ সালে দুটি আবাসিক হোস্টেল চালু হয়। এর মধ্যে একটি ছাত্রদের, অন্যটি ছাত্রীদের। প্রথমে এটি মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করতেন। সে সময় ম্যাটসের কার্যক্রমের জন্য এখানে কিছু ভবন নির্মাণ করা হয়। ১৯৯২ সালে থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের ভবন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পরে এই মেডিকেল কলেজ নতুন ভবনে স্থানান্তর হয়। এরপর এখানে আইএসটির কার্যক্রম শুরু হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চারতলা এই হলে মোট ৭২টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিটি কক্ষে দুজন শিক্ষার্থী থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এ হিসাবে মোট ১৪৪ শিক্ষার্থী থাকার জায়গা রয়েছে এই হলে। হলের সিট বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন সজল কুমার ঘোষ। একটি সিটের জন্য এককালীন ৫-১০ হাজার টাকা নিতেন সজল।
সম্পর্কিত খবর
ট্রাম্প আপিল আদালতকে ফেডারেল নির্বাচনের বিদ্রোহের মামলায় গ্যাগ অর্ডার থামাতে বলেছেন