আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮: ৩৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও দাঁড়াচ্ছেন পুতিন
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগামী ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। রুশ প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের অন্তত ৬টি সূত্র দেশটির জাতীয় দৈনিক কমেরসান্তকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্রেমলিনের এক কর্মকর্তা দৈনিক কমেরসান্তকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। তিনি আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।’ আর একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, পুতিনের উপদেষ্টারা আগামী নির্বাচনে তার অংশগ্রহণ সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও দাঁড়াচ্ছেন পুতিন
অপর চারটি সূত্রও এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির অন্যতম শীর্ষ এজেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার রাজনীতিতে আসেন ১৯৯৪ সালে। তার তিন বছর আগেই অবশ্য এক সামরিক অভ্যুত্থানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যায়। ১৯৯৪ সালে রাশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর সেন্ট পিটার্সবুর্গের ডেপুটি মেয়র হন পুতিন। তারপর ১৯৯৬ সালে সেন্ট পিটার্সবুর্গ ছেড়ে মস্কোতে এসে কর্মকর্তা হিসেবে ক্রেমলিনে যোগ দেন।
২০০০ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেৎসীন পদত্যাগ করার পর রাশিয়ার অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট হন।
পরে ওই বছরের মে মাসে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হন তিনি। মূলত ২০০০ সালের নির্বাচনের পর ‘পুতিন যুগে’ প্রবেশ করে রাশিয়া। এই মুহূর্তে রাশিয়ায় একটানা সবচেয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ডটি পুতিনের দখলে। গত ২৩ বছর ধরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে রয়েছেন তিনি। যদি ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনি জিতে যান, সেক্ষেত্রে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের পদটি তার জন্য সুরক্ষিত থাকবে।
আর নির্বাচনে দাঁড়ালে পরাজিত হওয়ার সম্ভাবনাও তার প্রায় নেই। কারণ প্রথমত, বর্তমানে পুতিনের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন— এমন কোনো জনপ্রিয় নেতা এই মুহূর্তে রাশিয়ায় নেই এবং সম্প্রতিক বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, রাশিয়ার মোট জনসংখ্যার ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ প্রেসিডেন্টের পদে পুতিনকে দেখার পক্ষে।রাশিয়ার আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আবারো প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন। সম্প্রতি ইউক্রেনে লড়াইরত যোদ্ধাদের রুশ সর্বোচ্চ সামরিক পদক ‘হিরো অব রাশিয়া’ প্রদান অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এ ঘোষণা দেন তিনি। ২০২৪ সালের ১৭ মার্চ দেশটিতে নির্বাচন হওয়ার কথা।
খবর রয়টার্স, আনাদোলু এজেন্সি। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমার নানা চিন্তা-ভাবনা ছিল, বিষয়টি আমি গোপন করব না। তবে এখন একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এসেছে। আমি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়ব।’ এর আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে লড়তে পুতিনের প্রতি বহু মানুষ আহ্বান জানিয়েছেন।’ সম্প্রতি রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ভোটাভুটির পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
পরদিনই প্রার্থিতার ঘোষণা দেন পুতিন। ১৭ মার্চের ওই নির্বাচনে বিজয়ী হলে ২৪ বছরের নেতৃত্বের মেয়াদ আরেক দফা বাড়বে। এর আগে আট বছর দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন পুতিন।
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থার ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন পুতিন। ফলে আগামী মার্চের নির্বাচনে পুতিনের জয় একেবারে নিশ্চিত। পুতিনবিরোধীদের রাশিয়া ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে অথবা কারাবন্দি করা হয়েছে। এছাড়া দেশটিতে স্বাধীন গণমাধ্যমের অনুপস্থিতি দেখা যায়।
২০২০ সালে রাশিয়ার সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের মেয়াদ চার থেকে ছয় বছর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ফলে আগের মেয়াদ বাতিল করে পুতিন স্পষ্টত আগামী বছর আবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর সুযোগ পাচ্ছেন।মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয় পেলে পুতিন ২০৩০ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকতে পারবেন এবং আবার প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে তিনি আরেক মেয়াদে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে যেতে পারেন।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার অনলাইনে দেয়া এক বিবৃতিতে দেশটির কারাবন্দি বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘তারা যেন পুতিন ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীকে ভোট দেন।’আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এরই মধ্যে দুজন ব্যক্তি অংশ নেয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে জানা গেছে। তারা হলেন দেশটির সাবেক আইনপ্রণেতা বরিস নাদেজদিন এবং সাংবাদিক ও আইনজীবী ইয়েকাতেরিনা দুন্তসোভা। প্রসঙ্গত, রাশিয়ান ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত হওয়া ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিজিয়া ও খেরসন অঞ্চলের বাসিন্দারা এবারই প্রথম দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেবে।
রাশিয়ার ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। ইউক্রেনে লড়াইরত যোদ্ধাদের রাশিয়ার সর্বোচ্চ সামরিক পদক প্রদান অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন পুতিন। পঞ্চম মেয়াদে পুতিনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। ফলে প্রতিবেশী ইউক্রেনের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়ারও সুযোগ পাচ্ছেন তিনি।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এ যুদ্ধ শুরু হয়। আগামী ১৭ মার্চ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ গত বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই তারিখ ঘোষণা করে। নির্বাচিত হলে ৭১ বছর বয়সী পুতিনের ২৪ বছরের নেতৃত্বের মেয়াদ আরেক দফা বাড়বে। অবশ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ৮ বছর কাটিয়েছেন তিনি। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা জোসেফ স্টালিনের পর পুতিনের শাসনকাল এখন রাশিয়ার যেকোনো শাসকের চেয়ে বেশি। পুতিনের প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্তে অবাক হওয়ার কিছু ছিল না।
ইউক্রেনে চলমান সামরিক অভিযানের কারণে দেশপ্রেমের পালে হাওয়া লাগায় রাশিয়ায় তাঁর জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। আর্তায়ুম চোগা নামের একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ‘হিরো অব রাশিয়া’ স্বর্ণপদক পান। পদক গ্রহণের সময় পুতিনকে নির্বাচনে আবারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অনুরোধ জানান তিনি। পরে এই সামরিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি (পুতিন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।’ এর আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছিলেন, নির্বাচনে লড়তে পুতিনের প্রতি অনেক মানুষ আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র: রয়টার্স