আপডেট :২৭ নভেম্বর ২০২০, ০৮:৪৭ এএম | অনলাইন সংস্করণ আলী যাকের আর নেই
আলী যাকের আর নেই
বিশিষ্ট অভিনেতা, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক, প্রগতিশীল সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব আলী যাকের আর নেই। শুক্রবার সকাল পৌনে ৭টায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।একুশে পদকপ্রাপ্ত এ অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গণমাধ্যমকে আরও বলেন, তাকে দাফনের ব্যাপারে পারিবারিকভাবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি।
উনাকে বিদায়ের জন্য সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট থেকে কোনও আনুষ্ঠানিকতার সুযোগ আর পাচ্ছি না। কারণ, উনি কোভিড পজিটিভ ছিলেন। বার্ধক্যজনিত সমস্যা ও হৃদরোগসহ কিছু শারীরিক জটিলতা নিয়ে গত ১৭ নভেম্বর ঢাকার শ্যামলীর একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আলী যাকেরকে। সেখানে তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।
বেশ কিছু দিন ধরেই শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন আলী যাকের। সেটা হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে করোনা টেস্ট করা হলে পজিটিভ ফল আসে। গেল কয়েক বছর ধরে আলী যাকের ক্যানসারের সঙ্গেও লড়াই করছিলেন। তাই সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে নিজেকে কিছুটা সরিয়ে নিয়েছেন।১৯৭২ সালের আরণ্যক নাট্যদলের ‘কবর’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে পথচলা শুরু করেন এই নাট্যব্যক্তিত্ব। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৩ সাল থেকে কাজ করছেন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায় নিয়ে। মঞ্চের পাশাপাশি টিভি নাটকেও সমাদৃত হন এই তারকা। স্ত্রী সারা যাকেরকে নিয়ে গড়ে তোলেন দেশের বৃহৎ বিজ্ঞাপনী সংস্থা। সাম্প্রতিক সময়ে যার হাল ধরেছেন তারই পুত্র অভিনেতা ইরেশ যাকের।
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আলী যাকের আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) । আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন বরেণ্য এই অভিনেতা। তাঁর বয়স ছিল ৭৬ বছর। প্রথম আলোকে মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাংসদ আসাদুজ্জামান নূর। তিনি জানান, আজ বেলা ১১টায় শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য আলী যাকেরের মরদেহ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে নেওয়া হবে। এরপর দাফন। তবে কোথায় দাফন হবে, এখনো সেটা ঠিক হয়নি।
বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন আলী যাকের। সেই চিকিৎসার অংশ হিসেবে নিয়মিত থেরাপি চলছিল তাঁর।
গত সপ্তাহে শারীরিক সমস্যা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় জরুরি ভিত্তিতে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে তাঁকে সিসিইউতে নেওয়া হয়।পরে কিছুটা সুস্থ হলে গত শনিবার বাসায় নেওয়া হয়। রোববার আবার ভর্তি করানো হয়। সোমবার কোভিড-১৯ টেস্ট করানো হয়। ফলাফল হাতে পেলে জানা যায়, তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ।১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার রতনপুর গ্রামে। আলী যাকের ছিলেন চার ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়।
তাঁর বাবা মোহাম্মদ তাহের ছিলেন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। বাবার চাকরির বদলি সূত্রে অল্প বয়সে কুষ্টিয়া ও মাদারীপুরে কাটান আলী যাকের।আলী যাকের ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মুনীর চৌধুরীর ‘কবর’ নাটকে প্রথম অভিনয় করেন। ওই বছরেরই জুন মাসে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ে যোগ দেন। তখন থেকে নাগরিকই তাঁর ঠিকানা। ‘বাকি ইতিহাস’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’ ‘সৎ মানুষের খোঁজে’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’, ‘কোপেনিকের ক্যাপটেন’, ‘গ্যালিলিও’, ‘ম্যাকবেথ’সহ অনেক আলোচিত মঞ্চনাটকের অভিনেতা ও নির্দেশক তিনি। পাশাপাশি টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করেও তিনি পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। ‘
আজ রবিবার’, ‘বহুব্রীহি’, ‘তথাপি’, ‘পাথর’, ‘দেয়াল’সহ বহু নাটকে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন আলী যাকের। বেতারে ৫০টির বেশি নাটক করেছেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। টেলিভিশনের জন্য মৌলিক নাটক লিখেছেন। নানা বিষয়ে দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখিও করেছেন দীর্ঘদিন। প্রকাশিত হয়েছে বই—‘সেই অরুণোদয় থেকে’, ‘নির্মল জ্যোতির জয়’।
শখ করে ফটোগ্রাফিও করেন তিনি।আলী যাকের নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সভাপতি।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি। যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির পূর্ণ সদস্য। পেয়েছেন একুশে পদক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মুনীর চৌধুরী পদক, নরেন বিশ্বাস পদকসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০১৯-তে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেতা আলী যাকের। বিজ্ঞাপনী সংস্থা এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপের চেয়ারম্যান তিনি।
স্ত্রী স্বনামধন্য অভিনয়শিল্পী সারা যাকের, ছেলে অভিনেতা ইরেশ যাকের, ছেলের বউ মিম রশিদ, নাতনি নেহা ও মেয়ে শ্রিয়া সর্বজয়াকে নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। সব ছেড়ে আজ সকালে তিনি পাড়ি দেন না–ফেরার দেশে।একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শব্দসৈনিক আলী যাকেরের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এক শোকবার্তায় শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ, দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আলী যাকেরের অবদান স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আলী যাকেরের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। আলী যাকেরের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।