দীর্ঘদিন ধরেই দেশে চলছে ডলার সংকট। এ সংকট কাটাতে অব্যাহত ডলার বিক্রি, আকুসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধে ক্রমেই কমছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রিজার্ভ কমেছে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি। Bd news Bangla
এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গ্রস রিজার্ভ নেমে এসেছে ২৫ বিলিয়নে। আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ গণনা করলে তা আরও কমে ২০ বিলিয়নের নিচে নেমে যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবে চলতি অর্থবছরের শুরুতে দেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক শূন্য ২ বিলিয়ন ডলারে।
সম্পর্কিত খবর
- ডলারের দাম কমলো ৫০ পয়সা
- দুই মাসের প্রশিক্ষণে কর্মসংস্থানে চার হাজারের বেশি তরুণ-তরুণী
- দেশে রিজার্ভের পরিমাণ জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক
অর্থাৎ পাঁচ মাসের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ৬ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলে (আইএমএফ) শর্ত পরিপালন করে রিজার্ভ বিপিএম-৬ অনুযায়ী হিসাব করলে বর্তমানে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৯ দশকি ৪০ বিলিয়ন ডলার। তবে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ হবে ১৬ বিলিয়ন ডলারের চেয়েও কম।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট ডলার সংকট ঠেকাতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু কোনোভাবেই সংকট সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকানোর পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজন মেটাতে প্রতিনিয়তই দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। এজন্য কমে যাচ্ছে রিজার্ভ। তবে নির্বাচনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিদেশি ঋণের প্রবাহ বাড়বে। এতে রিজার্ভের পতন থামবে বলেও মনে করছেন তারা। Bd news Bangla
তথ্য বলছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার-সংকট থাকায় জ্বালানি ও নিত্যপণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক
এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৩৫৮ কোটি ডলার বিক্রি করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৫ মাসে রিজার্ভ থেকে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এতে ৬ মাসে রিজার্ভ কমেছে ৬ বিলিয়নের বেশি। অর্থাৎ প্রতিমাসে গড়ে রিজার্ভ থেকে কমছে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার।
গত অর্থবছরের শুরুর দিকে দেশে ডলারের সংকট দেখা দিলে আমদানিতে কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময় নিত্যপণ্য বাদে বিলাসী পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন দেওয়া হয়। এতে এলসি নিষ্পত্তি ও পরিশোধ কমে যায়। গত জুনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গণমাধ্যমকে জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে কোনো ব্যাংকের কাছে সস্তায় কিংবা স্বাভাবিক দামেও ডলার বিক্রি করা হবে না। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত স্বাভাবিক দামেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। যেই ডলারের দাম বাজার দরের চেয়ে অনেক কম ছিল।
তবে আশার দিক হচ্ছে, সেপ্টেম্বরে বড় বিপর্যয়ের পর অক্টোবরে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। গত মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। গত বছরের অক্টোবরে ১৫২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছিল। সে হিসাবে গত মাসে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ। আর চলতি মাসের প্রথম ২৪ দিনে ১৪৯ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।
এর আগে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় বিপর্যয় হয়েছিল। সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল মাত্র ১৩৩ কোটি ডলার, যা ছিল ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। ডলারের বিনিময় হার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নমনীয় অবস্থানের কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
অপরদিকে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের মধ্যে গত অক্টোবরেই সবচেয়ে কম এসেছে রপ্তানি আয়। গত অক্টোবরে গত বছরের একই মাসের চেয়ে রপ্তানি কমেছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গত মাসে ৩৭৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গত বছরের একই মাসের চেয়ে যা ৬০ কোটি ডলার কম। গত বছরের অক্টোবরে ৪৩৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৮২ কোটি ডলার।