আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২২, ১২:০০ এএম | অনলাইন সংস্করণ
শর্মিলী আহমেদ দীর্ঘদিন ক্যানসারে ভুগছিলেন। সম্প্রতি সর্বশেষ ২৯ নম্বর কেমো দেয়া হয়। শুক্রবার ভোরে তার অবস্থার অবনতি ঘটে। এ সময়ই তিনি মারা যান।
জনপ্রিয় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ (৭৫) আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। আজ শুক্রবার ভোরে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসায় তিনি ইনতেকাল করেন। তার পারিবারিক সূত্র এ খবর নিশ্চিত করেছে।
তবে তার জানাজার বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।Bangla News | bd news bangla
১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ মহসিন পরিচালিত ‘আগুন’ নাটকে প্রথমবারের মতো মায়ের ভূমিকা পালন করেছিলেন।
মূলত এরপর থেকে নাটক ও সিনেমায় শর্মিলী আহমেদ মা ভূমিকায় অভিনয় করে আসছেন। তার আসল নাম মাজেদা মল্লিক।
শর্মিলী আহমদের তানিমা নামের একজন মেয়ে আছেন।
জনপ্রিয় অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ আর নেই। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি রাজধানীর উত্তরার বাসায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। এর আগে তাকে হাসপাতাল থেকে বাসায় আনা হয়েছিল। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তার বোন ওয়াহিদা মল্লিক জলি জানিয়েছেন, শর্মিলী আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারে ভুগছিলেন।
সম্প্রতি তার ২৯ নম্বর কেমো দেওয়া হয়। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবর জানিয়ে সংসদ-সদস্য অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তফা এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘আমাদের সময়ের অসাধারণ এক অভিনয়শিল্পী, আমার প্রিয় চাচি আজ সকালে নিজ বাসায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
তার প্রয়াণে গোটা নাট্যজগত তাদের প্রিয় ‘আম্মা’কে হারালেন।
’ তার মৃত্যুতে নাট্যাঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোক জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। দিনভর সামাজিক যোগাযোগসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নাটক ও সিনেমা সংশ্লিষ্টরা শোক বার্তা জানিয়েছেন।
গতকাল বাদ জোহর রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টর মসজিদ প্রাঙ্গণে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর রাজধানীর বনানী কবরস্থানে স্বামী রকিব উদ্দিন আহমেদের কবরের পাশেই তাকে সমাহিত করা হয়। ১৯৪৭ সালের ৮ মে রাজশাহীতে জন্ম শর্মিলী আহমেদের। চার বছর বয়সে তার অভিনয়ে হাতেখড়ি। রাজশাহী বেতারের শিল্পী ছিলেন তিনি। ষাটের দশকে চলচ্চিত্র অঙ্গনে ক্যারিয়ার শুরু। ১৯৬৪ সালে তিনি সিনেমায় অভিনয় শুরু করেন। যদিও তার অভিনীত প্রথম সিনেমা ‘ঠিকানা’ (উর্দু ভাষায় নির্মিত) আলোর মুখ দেখেনি।
পরে সুভাষ দত্তের ‘আলিঙ্গন’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’ এবং ‘আবির্ভাব’ সিনেমায় অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পান তিনি। শর্মিলী আহমেদের আনুষ্ঠানিক নাম মাজেদা মল্লিক। প্রখ্যাত এই অভিনেত্রীকে মায়ের ভূমিকায় সর্বপ্রথম দেখা গিয়েছিল ১৯৭৬ সালে মোহাম্মদ মহসিন পরিচালিত ‘আগুন’ নাটকে। তার স্বামী রকিবউদ্দিন আহমেদও ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক।
তার নির্মিত ‘পলাতক’ ছবিতে অভিনয় করেন স্ত্রী শর্মিলী আহমেদ। জীবদ্দশায় পাঁচ শতাধিক নাটক এবং একশরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন শর্মিলী আহমেদ। আশি ও নব্বইয়ের দশকে এত বেশি সিনেমা আর নাটকে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন যে তার ওই ভূমিকাই অনেক দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে। বিনোদন অঙ্গনে তিনি সবার কাছে ‘মা’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। সবাই তাকে ‘শর্মিলী মা’ বলেই ডাকতেন।
অভিনয়জীবনে মঞ্চ, টিভি ও চলচ্চিত্রের বৈচিত্র্যপূর্ণ চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করে সবার মন জয় করেছেন তিনি। অভিনয়ে ব্যস্ত থাকলে অনেক সময়ই পরিবারে সময় দিতে পারেন না অভিনয়শিল্পীরা। কিন্তু শর্মিলী আহমেদ একেবারে আলাদা।
অভিনয় ও সংসার দুটিই সামলেছেন তিনি। সংসারে কী রান্না হবে, কে কী খাবেন এসব বুঝিয়ে দিয়েই প্রতিদিন ছুটতেন শুটিংয়ে। অভিনেত্রী ও মা দুই জায়গাতেই সফল ছিলেন শর্মিলী আহমেদ। শুটিংয়ে যেমন তিনি সময় দিয়েছেন, তেমনি পরিবারের প্রতিটি কাজের দিকে খেয়াল রেখেছেন। প্রথম দিকে পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কম থাকলেও মা হওয়ার পর দায়িত্ব বেড়ে যায়। সে সময় অবশ্য অভিনয় কমিয়ে দেন। সিনেমা ও নাটকের বেশির ভাগ শুটিং তিনি ঢাকার মধ্যেই করতেন, যেন সন্তানদের সময় দিতে পারেন। সন্তানদের মানুষ করতে অভিনয়টা একটু কমিয়ে দিয়েছিলেন শর্মিলী।